পুঠিয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে তিন বছরে অর্ধকোটি টাকার মালিক


অনলাইন ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 04-11-2024

পুঠিয়ায় ভারপ্রাপ্ত  প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে তিন বছরে অর্ধকোটি টাকার মালিক

রাজশাহীর সদরে পুঠিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাজহারুল ইসলাম মিন্টু দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে তিন বছরে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করে বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধকোটি হাতিয়ে নিয়েছেন।

সম্প্রতি বিদ্যালয়ে থাকা একটি বড় মেহগনি গাছ অনুমতি ছাড়াই কেটেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোপূর্বে বিদ্যালয়ের তিনটি গাছ কাটার নজির তার রয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছেন ২০২১ সালের জুন মাসে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে ৭৫০ জন।

শনিবার রাত ৮টায় বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের ভিতরে থাকা একমাত্র বড় মেহগনির গাছটি কেটে ১৪ টুকরো করে মাঠের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে। এর আগেও মিন্টু মাস্টার বিদ্যালয়ে থাকা ৩টি নারিকেল গাছ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে উধাও করে দিয়েছেন। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ছায়া দেওয়ার মতো আর গাছ রইল না। ফলে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়ল।

অভিভাবকদের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম মিন্টু ৭৫০ জন শিক্ষার্থীদের নিকট হতে বাৎসরিক সেশন চার্জ বাবদ জনপ্রতি ১ হাজার ২শ টাকা করে আর প্রতিটি পরীক্ষার ফি বাবদ ৩শ হতে ৪শ টাকা নিয়ে থাকেন; যা উপজেলার কোনো বিদ্যালয়ে এত কঠোরভাবে টাকা আদায় হয় না অভিভাবকরা জানিয়েছেন। তিনি দায়িত্ব থাকা অবস্থায় সেশন চার্জ বাবদ টাকা নেওয়ার কোনো রশিদ ছাত্রীদের দেয়নি। তারপর বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব কাউকে দেওয়া হয় না। অতীতে ৩টি বিদ্যালয়ের গাছ কাটা হয়েছে তার কোনো হিসাব বিদ্যালয়ে নেই।

এছাড়া অষ্টম এবং নবম ভোকেশনাল রেজিস্ট্রেশন বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করাদের নিকট হতে প্রশংসাপত্র বিতরণ কালে মিষ্টি খাওয়ার জন্য ৩ থেকে ৫শ টাকা হারে জনপ্রতি আদায় করা হয়। এসব অর্থ প্রধান শিক্ষক নির্দিষ্ট ৩ জন ম্যাডামের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে থাকেন। সরকার হতে পাওয়া বিভিন্ন রকম বরাদ্দের সঠিক কোনো হিসাব নেই। কাউকে দেওয়া হয় না।

বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার ঘোষ এবং সাবেক পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের এমপি আব্দুস সাত্তার মণ্ডলের সময়ে ক্রয়কৃত চেয়ার এবং পুরাতন আলমারিতে নতুনভাবে রং করে। জেলা পরিষদের বরাদ্দ হতে টাকা নাম লিখে রাখা হয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার সাড় তিন বছরে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাত হতে প্রধান শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম মিন্টু বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধকোটি হাতিয়ে নিয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটতে হলে বন বিভাগ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা হয়; কিন্তু প্রধান শিক্ষক রাতের অন্ধকারে বিদ্যালয়ের গাছ কেটে ফেললেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের বিদ্যালয়ের লুটপাটের টাকার ভাগ দেওয়ায়, দীর্ঘদিন ধরে সদরের বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পুঠিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম মিন্টু বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে সব অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া এলাকাবাসী সম্মতি দিয়েছেন। এই কথা বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে বিদ্যালয়ের গাছ কাটার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। আমরা তা জানতাম। খুব বড় অপরাধমূলক কাজ করেছেন শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি (ইউএনও) একেএম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই। তবে আমি বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]