টানা বর্ষণে স্পেনে শুরু হয়েছে বন্যা, মৃতের সংখ্যা ২০০


আন্তর্জাতিক ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 02-11-2024

টানা বর্ষণে স্পেনে শুরু হয়েছে বন্যা, মৃতের সংখ্যা ২০০

ভয়াবহ বন্যায় ডুবেছে স্পেন। ‘আর্মাডা’র দেশে শুরু হয়েছে মৃত্যুমিছিল। নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। নিখোঁজ বহু। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো বৃষ্টি থামার নামই নিচ্ছে না। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর স্পেনের দক্ষিণাংশে শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টি। যার জেরে বেশ কয়েকটি জায়গায় আঘাত হানে হড়পা বান। যা রাস্তায় থাকা বড়-ছোট গাড়ি হোক বা দোকান— সমস্ত কিছুকেই ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ‘রুদ্রমূর্তি’ ধারণ করা সেই হড়পা বানের উপগ্রহ চিত্রও প্রকাশ্যে এসেছে।

স্পেন প্রশাসনের দাবি, বৃষ্টি ও হড়পা বানের জোড়া ফলায় সর্বাধিক ক্ষতবিক্ষত হয়েছে দক্ষিণের ভ্যালেন্সিয়া এলাকা। ছবির মতো সাজানো সেখানকার উপকূলবর্তী জনপদগুলিকে একরকম ধ্বংস করে দিয়েছে হড়পা বান। এই এলাকায় মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসক কার্লোস ম্যাজ়ন।

মাদ্রিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবর এবং ১ নভেম্বর দেশের দক্ষিণাংশ জুড়ে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। ফলে একাধিক বার হড়পা বানের কবলে পড়েছে উপকূলবর্তী বহু এলাকা। ভ্যালেন্সিয়াকে বাদ দিলে ক্ষতি হয়েছে আন্দালুসিয়া এবং হুয়েলভাতেও।

স্পেনের সংবাদমাধ্যমগুলির আবার দাবি, হ্যালোউইন উৎসবে যোগ দিতে বহু মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। ঠিক তখনই হড়পা বান আসে। ফলে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছতে পারেননি। যা মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

এই পরিস্থিতিতে বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে মাদ্রিদ প্রশাসন। সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত আমজনতাকে নিজের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। তবে আকাশ পুরোপুরি পরিষ্কার হতে আরও দু’তিন দিন লাগতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধারকাজে পুলিশ, দমকলবাহিনী, সিভিল ডিফেন্সের সঙ্গে সেনাও নামিয়েছে স্পেনীয় সরকার। অন্তত ৭৫০ জন সৈনিক যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।

উল্লেখ্য, হড়পা বানের পাশাপাশি দক্ষিণ উপকূলের এলাকাগুলির উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভয়ঙ্কর কাদার স্রোত। যার জেরে কাদার স্তূপের নীচে অনেকের চাপা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাটি সরিয়ে তাঁদের জীবিত অবস্থায় বার করে আনা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের বলে মনে করছেন উদ্ধারকারীরা।

যদিও এই আবহে হাল ছাড়ছেন না তাঁরা। কাদা এবং হড়পা বানের ধাক্কায় এক দিকে ডাঁই হয়ে যাওয়া গাড়ির স্তূপ সরিয়ে জীবনের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। ভ্যালেন্সিয়ার উত্তরে ক্যাসেলনে, কাতালনিয়ার দক্ষিণে তারাগোনা এবং পূর্ব উপকূলের বালিয়ারিক দ্বীপের বন্যাদুর্গতদের অবস্থা খুবই খারাপ বলে জানা গিয়েছে।

হড়পা বানে দক্ষিণ স্পেনের বেশ কিছু জায়গায় রেললাইন উপড়ে গিয়েছে। পাহাড়ি সুড়ঙ্গের রাস্তা দিয়ে প্রবল গতিতে বয়ে যাচ্ছে জল। ফলে বন্যাবিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ পাঠাতে সমস্যায় পড়েছে স্পেনের প্রশাসন।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের আবার দাবি, ওই এলাকাগুলি থেকে জল নামলে শীতের শুরুতে দেখা দিতে পারে রোগের প্রাদুর্ভাব। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসঘটিত সংক্রামক ব্যধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি। ছড়াতে পারে জলবাহিত রোগও।

এহেন পরিস্থিতিতে আবার স্পেনের জোট সরকারের উপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বন্যাদুর্গতদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, ত্রাণ থেকে শুরু করে জীবনরক্ষা, সবক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে পেড্রো স্যাঞ্চেসের সরকার।

১ নভেম্বর আবহাওয়া দফতরের কার্যালয় পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী স্যাঞ্চেস। বন্যা নিয়ন্ত্রণে খোলা কন্ট্রোল রুমেও দীর্ঘ ক্ষণ তাঁকে দেখা গিয়েছে। সেখানে কর্মরত আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন তিনি।

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এর পরও বন্যাদুর্গতদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। ফলে আগামী দিনে জনসমর্থন হারাতে পারেন তিনি। এই ইস্যুতে ইতিমধ্যেই বিরোধীরা সুর চড়াতে শুরু করেছেন।

স্পেনের বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, বৃষ্টির পূর্বাভাস আগে থেকে দিতে পারেনি সরকার। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে অযথা দেরি করা হয়। যার মাসুল দক্ষিণাংশের হতভাগ্য বাসিন্দাদের জীবনের বিনিময়ে দিতে হয়েছে।

স্পেনের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এই ধরনের বন্যা বা হড়পা বান দেখা যায়নি। এর নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনও হাত রয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]