বগুড়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের আলুসহ অন্যান্য ফসল সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হয়েছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ৪০টি হিমাগার। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে অহিমায়িত মডেল ঘর। তবে কৃষকদের কাছে এ ঘর হিমাগার হিসেবেই পরিচিত। গত ২০ জুলাই এসব মডেল ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে আগে তৈরি কয়েকটি ঘরের ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে আলু সংরক্ষণ করে এরই মধ্যে সুফল পেতে শুরু করেছেন কৃষকরা।
বগুড়ায় আলুর উৎপাদন বেশি হলেও কৃষকরা বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন না গরমে পচে যাওয়ার কারণে। ফলে অনেকে জমি ধরে আলু বিক্রি করে দেন। আবার হিমাগারে আলু রাখতেও যে পরিমাণ ব্যয় হয়, তা বিক্রির দামে পুষিয়ে ওঠা যায় না। সব বিবেচনা করে কৃষকরা যাতে মাচা পদ্ধতিতে বাড়িতেই আলু অন্তত তিন মাস সংরক্ষণে রাখতে পারেন। এজন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে মাচার আদলে বিশেষ অহিমায়িত ঘর তৈরির নতুন প্রকল্প হাতে নেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এ বছরই আলুর বহুমুখী ব্যবহার সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জেলার ৭টি উপজেলায় মডেল হিসেবে নির্মাণ করা হয় ৪০টি অহিমায়িত মডেল ঘর। যার প্রতিটির ব্যয় ধরা হয় আড়াই লাখ টাকা করে। এর মধ্যে বগুড়া সদরে ৭টি, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৬টি, দুপচাঁচিয়ায় ৬টি, কাহালুতে ৬টি, নন্দীগ্রামে ৬টি, শাজাহানপুরে ৬টি ও আদমদীঘিতে ৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৯টি মডেল ঘর তৈরির কাজ শেষ হয় গত মার্চে। তাতে কৃষকরা আলু রেখেছেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বাঁশ, কাঠ, ঢেউটিন, সিমেন্টের পিলার, ককসিট ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের মডেল ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের জমিতেই। এমন একটি মডেল ঘরের আলু রাখার ধারণক্ষমতা ৩০ টন করে। ৩০ জন কৃষককে নিয়ে সমিতির ভিত্তিতে একজন কৃষক এক টন করে আলু রাখার সুযোগ পাচ্ছেন। যদিও বলা হচ্ছে, ৯০ দিন আলু সংরক্ষণ করা যাবে এসব মডেল ঘরে, তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে ১২০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আলু হিমাগারে সংরক্ষণ না করে বসতবাড়িতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে উত্তোলন মৌসুম অপেক্ষা বেশি মূল্য পাবেন চাষি। ১৫ থেকে ২০ বছর ব্যবহারযোগ্য এসব মডেল সংরক্ষণাগার উঁচু ও খোলা এবং আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে।
কৃষি বিপণন বিভাগের মাঠ ও বাজার পরিদর্শক আবু তাহের বলেন, এই অহিমায়িত মডেল ঘরে আলু রাখার কিছু শর্তও আছে। এখানে সঠিকভাবে বাছাই করা আলু সংরক্ষণ করতে হবে। কাটা, ফাটা, অপরিপক্ব, রোগযুক্ত ও ছাল ওঠা আলু রাখা যাবে না। সংরক্ষণাগারে যাতে সূর্যের আলো ও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মমতা হক বলেন, কৃষকের বসতবাড়িতে রাখার জায়গার অভাব ও নগদ টাকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে অনেকে দ্রুত আলু বিক্রি করে দেন। এতে তারা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হন। অহিমায়িত মডেল সংরক্ষণাগারে কৃষকরা বিনা খরচেই আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন। আলু বিক্রি করে দেওয়ার পর পেঁয়াজ, মিষ্টিকুমড়া, ভুট্টা, কচুরমুখিসহ বিভিন্ন ফসল সংরক্ষণ করা যাবে।