সাবেক এমপি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূইয়া এবং মৃণাল কান্তি দাসের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন। এছাড়া সুবিদ আলীর স্ত্রী মাহমুদা আখতার এবং তাদের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ আলীর দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে। দুদকের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম সংশ্লিষ্টদের বিদেশ যাত্রা ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আবেদন দুই এমপির বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগের পৃথক বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ থেকে কুমিল্লা-১ আসনের এমপি ছিলেন সুবিদ আলী। তার বিরুদ্ধে দুদকের আবেদন বলা হয়, সুবিদ আলী ভূইয়া ও তার ছেলে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি, লুটপাট, ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তারা নিজ নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানের বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থে অর্থপাচার প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ছিলেন মৃণাল কান্তি। তার সঙ্গে তার স্ত্রীরও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মৃণাল কান্তি দাসের বিরুদ্ধে দুদকের আবেদনে বলা হয়, তিনি ১০ বছর এমপি হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। মৃণাল কান্তি অবৈধ আয়ে ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় ১ হাজার ৭৮৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় সাড়ে ৭ কাঠা আয়তনের একটি প্লট রয়েছে তার, যার আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা। এতে বলা হয়, নিজ নামে ব্যাংক হিসাবে এক কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৮৯১ টাকা, ৮৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬৩১ টাকার গাড়ি এবং তার স্ত্রী নিলীমা দাসের নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ১০৫ কাঠার প্লটের ওপর বহুতল ভবন ও ৯০ লাখ ২৪ হাজার ১৯১ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে বলে গোপন সূত্রে দুদক জানতে পারে।
অনুসন্ধানকালে দুদক গোপন সূত্রে জানতে পারে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তাদের বিদেশে যাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা: মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টের (আরএইচডি পার্ট) পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিততে এই আদেশ দেন।
এদিন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। আবেদনে বলা হয়, মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টের (আরএইচডি পার্ট) পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বেতনভাতা ব্যতীত অন্য কোনো বৈধ উৎস না থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত উৎস থেকে অর্জিত ১৩৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮২টি হিসাবে লেনদেন, তার আয়কর নথিতে ৪ কোটি ১০ লাখ টাকার নিট সম্পদ প্রদর্শনের বিপরীতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে বর্তমানে ৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা স্থিতি থাকা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সম্পৃক্ত অপরাধ করাসহ নিজ নামে ও তার ওপর নির্ভরশীলদের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তার নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবসমূহে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে।