এপ্রিলে তীব্র তাপপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছে দেশবাসী। ওই সময় চরম হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে ঘুরে ফিরে আসে গাছের কথা। এই পরিস্থিতির জন্য সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অপরিকল্পিত গাছ কাটার সমালোচনা যেমন হয় তেমনি নতুন করে গাছ লাগানোর কথাও বলেন অনেকে। এই অবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন বৃক্ষরোপণ অভিযানে নামে। কিন্তু তীব্র গরমের মধ্যে গাছ লাগানো নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা হয়। নেটিজেনদের অনেকে দাবি করেন, সঠিক সময়ে রোপণ করা না হলে গাছের চারাগুলো বাঁচবে না।
প্রতিবছরই গ্রীষ্মের খরতাপে মানুষ যখন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে তখন মানুষসৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা বড় করে সামনে আসে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা দেখা যায় বৃক্ষনিধন নিয়ে। কিন্তু দেড়-দুমাস পরই যখন প্রশান্তির বৃষ্টি নিয়ে বর্ষা চলে আসে তখন গাছ লাগানোর আলাপ খুব বেশি চোখে পড়ে না ফেসবুকে। কিন্তু আসলে গাছ লাগানোর সঠিক সময় কোনটি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষার শুরু কিংবা শেষভাগ চারা গাছ রোপণের জন্য উপযুক্ত সময়।
এপ্রিল মাসে তীব্র গরমের মধ্যেই কিছু সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন গাছ লাগানোর কর্মসূচি গ্রহণ করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত এসব কর্মসূচিতে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি চারা গাছগুলোও নষ্ট হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনভাইরনমেন্ট সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মো. রিদওয়ানুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন,গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় বর্ষার শুরু ও শেষে। বছরের বাকি সময়ে গাছের পরিচর্যা করা যেতে পারে। সারা বছর চারা গাছের যত্ন ও বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা করা যায়, তবে প্রচণ্ড গরমের সময় গাছ লাগানোর এই সব কর্মসূচি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক প্রচারণায় কাজে লাগলেও, পরিবেশের কোনও উপকারে আসবে না। কারণ, এ সময়ে রোপণ করা চারাগুলোকে আসলে নষ্ট করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের তাপমাত্রা দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এর দায়ভার নিজেদেরকেই নিতে হবে। কারণ শহরজুড়ে জলাশয় ভরাট, রাস্তা নির্মাণের জন্য গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে দ্রুত মাটি গরম হয়ে যাচ্ছে; কংক্রিট ভবন গরম হয়ে যাচ্ছে এবং প্রকৃত তাপমাত্রার চাইতে বেশি তাপ অনুভূত হচ্ছে।
মানবসৃষ্ট এসব দুর্যোগ ঠেকাতে দেশজুড়ে উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করা বন্ধের পরামর্শ দিয়ে তিনি বরং টেকসই উন্নয়নের দিকে বেশি নজর দেয়ার আহ্বান জানান।
সারা বছর গাছাড়া ভাবে থাকলেও, শুধুমাত্র দুর্যোগের ঘনঘটা দেখলেই পরিবেশের প্রতি মানুষের আবেগ দেখে আক্ষেপ করেন এই পরিবেশবিদ। বলেন, ‘কোনো কারণে গাছ কাটতে হলে বা বনভূমি ধ্বংস করার আগে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করে ফেলাও জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস গাছের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। এ সময় আলো-বাতাস, অনুকূল তাপমাত্রা ও বৃষ্টি পর্যাপ্ত থাকে। তাই চারাও সুন্দরভাবে প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠে।
তাছাড়া সঠিক স্থানে সঠিক চারা রোপণের ক্ষেত্রেও হতে হবে সতর্ক। এ সময়ে নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করা যায়। তবে ফলদ ও ওষুধি গাছের চারা লাগানোর প্রতি বেশি নজর দেয়ার কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। এতে ফল, ওষুধ এবং কাঠ সবই পাওয়া যায়। তবে চারা রোপণের চাইতে এসব চারা টিকিয়ে রাখার দিকেই বেশি মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ।