ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণ এবং হত্যা চেষ্টা মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আউয়াল জসিম’কে ফেনীর দাগনভূঁঞা থানাধীন মোমারিজপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৯ জুলাই ফেনী পৌরসভার তাকিয়া রোড এলাকা হতে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে মিছিলটি বড় মসজিদের সামনে পৌঁছায় এবং ছাত্র জনতা ওই স্থানে অবস্থান করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছিল। ছাত্রজনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ভিকটিম ওয়ার্কশপ কর্মচারী মোঃ আবদুল হান্নান (৩২) অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। আন্দোলন চলাকালীন ফেনী সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের প্ররোচনায় ও নির্দেশে ৭নং মাতুভূঁঞা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আউয়াল জসিম (৪৮) এবং অন্যান্য আসামিরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র জনতার বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এছাড়াও, আসামিরা হকি স্টিক, কিরিচ, দা ও লাঠি-সোটা দিয়ে ছাত্র জনতাকে পিটিয়ে এবং ককটেল বোমার বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এ সময় ভিকটিম মোঃ আবদুল হান্নান আন্দোলন কর্মসূচির স্থান থেকে দৌঁড়ে প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে বড় মসজিদ সংলগ্ন তাকিয়া রোড়ের মুখে পৌঁছালে ৭নং মাতুভূঁঞা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আউয়াল জসিম এবং অন্যান্য আসামিরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ছররা গুলি নিক্ষেপ করলে ভিকটিমের মাথায়, সমস্ত মুখমণ্ডলে এবং দুই চোখে গুলির স্প্লিন্টার লেগে ভিকটিম গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
আহত ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসামিরা তাদের হাতে থাকা লাঠি-সোটা, লোহার রড ও রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ভিকটিমকে মৃত ভেবে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন এবং ছাত্র-জনতা ভিকটিম মোঃ আবদুল হান্নানকে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে ভিকটিম উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় চক্ষু ইনিস্টিটিউট, ঢাকায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে। গুলির স্প্লিন্টারের আঘাতে ভিকটিমের বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে হারিয়ে যায় এবং ডান চোখের দৃষ্টি শক্তিও হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
ওই ঘটনায় ভিকটিম মোঃ আবদুল হান্নান বাদী হয়ে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানায় ৮৪ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ২৩, তারিখ- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ, ধারা- ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩২৩/৩২৬/৩০৭/১১৪, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ তৎসহ ১৯০৮ সালের বিষ্ফোরক দ্রব্যাবলি আইনের ধারা- ৩/৬।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, সূত্রে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি ৭নং মাতুভূঁঞা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আউয়াল জসিম ফেনী জেলার দাগনভূঁঞা থানাধীন মোমারিজপুর ডুমুরিয়া মসজিদ এর সামনে অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল সোমবার (৭ অক্টোবর) ৬টায় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি আব্দুল আউয়াল জসিম (৪৮), পিতা- নুর নবী, সাং- মোমারিজপুর, থানা- দাগনভূঁঞা, জেলা- ফেনীকে গ্রেফতার করে।
আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি এবং ৭নং মাতুভূঁঞা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হওয়ার কথা স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে আরো জানায়, মামলার ঘটনার দিন বেআইনি জনতাবদ্ধে সে তার সহযোগীদের নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর নির্বিচারে আক্রমণ করে হতাহতের ঘটনা ঘটায়। মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট থেকে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য সে ফেনী জেলার বিভিন্ন অবস্থানে আত্মগোপন করে আসছিল বলেও জানায়।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।