নওগায় হিজাব পরার কারণে ২০ ছাত্রীকে পেটালেন শিক্ষক


স্টাফ রিপোটার;নওগাঁ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 09-04-2022

নওগায় হিজাব পরার কারণে ২০ ছাত্রীকে পেটালেন শিক্ষক

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবারপুর উচ্চবিদ্যালয়ে হিজাব পরে স্কুলে যাওয়ার কারণে কমপক্ষে ২০ ছাত্রীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আমোদিনি পাল। গত বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

পিটুনি খেয়ে ছাত্রীরা স্কুল ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের জানালে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর জেরে কয়েক শ’ অভিভাবক গতকাল দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। এ সময় অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে না পেয়ে তারা স্কুলের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের দু’টি ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নির্যাতনের শিকার ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া আফরিন অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় সঙ্গীতের পর লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পাল কেন হিজাব পরে স্কুলে এসেছে এ কথা জিজ্ঞাসা করে ইউক্যালিপ্টাস গাছের ডাল দিয়ে তাদের প্রহার করেন। শিক্ষিকা তাদের জানিয়ে দেন যে, ‘স্কুলে কোন পর্দা চলবে না। ঢং করে আসছ। বাসায় গিয়ে বোরখা পড়ে থাকো। যখন তোমরা মহাদেবপুর বাজারে যাবে তখন পর্দা করবে। স্কুলে আসলে মাথার কাপড় ফেলে আসবে।’ তিনি ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার জন্য টানাটানি করেন। এমনকি যারা হিজাব ছাড়া শুধু মাস্ক পড়ে এসেছিল তাদের মাস্কও খুলে দেন। তিনি হুমকি দেন যে, ‘কাল থেকে যদি হিজাব ও মাস্ক পরে আসো তাহলে পিটিয়ে তোমাদের পিঠের চামড়া তুলে নেয়া হবে।’ শিক্ষার্থী সাদিয়া আরো জানায়, লাইনের কয়েকজন ছাত্রীকে মারতে মারতে তার কাছে এসে তাকে মারতে থাকলে লাঠি ভেঙে যায়। অন্যদের মধ্যে দশম শ্রেণীর ছাত্রী ঐশি, সুমাইয়া, তিথি, লাকি, নবম শ্রেণীর মোনাসহ কমপক্ষে ২০ ছাত্রীকে পিটানো হয়।

সাদিয়ার মা সাবেরা বেগম বলেন, তার মেয়ে স্কুল থেকে এসে কান্নাকাটি করে হিজাব পরার জন্য ম্যাডাম মেরেছে বলে জানায়। তিনিও বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা বড় হয়েছে। তারা তো পর্দা করবেই। স্কুলে গিয়েই ভদ্রতা শিখবে। তা না শিখিয়ে যদি এ রকম মারধর করে তাহলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়?’ তিনি তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণ দাবি করেন।

দশম শ্রেণীর আরেক ছাত্রী উম্মে সুমাইয়া আকতারের মা মরিয়ম নেছাও জানালেন একই কথা। তার মেয়ে সুমাইয়া ও তার ক্লাসমেট তিথি জাতীয় সঙ্গীতের পর স্কুলে গেলে তারা কেন হিজাব পরে স্কুলে গেছে সেই অপরাধে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল তাদেরকে পিটানোর জন্য শিক্ষক বদিউল আলমকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে বাদিউল মাস্টার সুমাইয়া ও তিথিকে লাঠি দিয়ে পিটায়। এই ঘটনার পর তার মেয়ে ক্লাস না করে বাড়ি এসে কাঁদতে থাকে। অভিভাবকরা জানান, গতকাল দুপুরে তারা স্কুল ঘেরাও করেন। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষিকা এদিন স্কুলে আসেননি। একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন। ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে ছাত্রীদের হেনস্থা করার বিষয় প্রমাণ হলেও তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকার জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। ঘটনার সত্যতা জানার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষিকা আমোদিনি পালের মোবাইলে কল কবলে সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর তিনি ফোন কেটে দেন। পরে করলেও তিনি রিসিভ করেননি। অভিযুক্ত অপর শিক্ষক বদিউল আলম জানান, হিজাব না পরায় ছাত্রীদের শিক্ষিকা আমোদিনি পাল মারধর করেছেন। তিনি নিজে কাউকে মারেননি।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রণী কান্ত বর্ম্মণ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, স্কুলে হিজাব পরে আসায় শিক্ষিকা আমোদিনি পাল ছাত্রীকে মারধর করেছেন। ঘটনার দিন তিনি স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে এসে বিষয়টি জেনেছেন। তবে বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ বিষয়ে তাকে শোকজ করবেন বলেও জানান। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান হিজাব না পরায় স্কুলছাত্রীদের পিটানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আগে তাকে শোকজ করি। তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান তিনি। তবে এ বিষয়ে থানায় কোন মামলা হয়নি বলেও তিনি জানান।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]