পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ করে হামলার শিকার কৃষক, মামলা করে বাড়ি ছাড়া


নোয়াখালী প্রতিনিধি: , আপডেট করা হয়েছে : 27-09-2024

পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ করে হামলার শিকার কৃষক, মামলা করে বাড়ি ছাড়া

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটর এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ করায় বসুরহাট পৌরসভায়র সাবেক মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার জলদস্যু জালাল বাহিনী হামলার শিকার হয়েছেন এক কৃষক। এরপর মামলা করেও প্রাণনাশের হুমকিতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী।

হামলার শিকার মিজানুর রহমান (৪৫) উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল কুব্বাতের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষক।  

গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু এবং পানি সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কোম্পানীগঞ্জের মুছারপুর রেগুলেটর এলাকা পরিদর্শনে গেলে অভিযোগ করলে একই দিন বেলা পৌনে ১২টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে।      

কৃষক মিজান অভিযোগ করে বলেন,উপদেষ্টাকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি অবহিত করায় আমার ওপর জলদস্যু জালাল বাহিনীর সদস্যরা উপদেষ্টার বহরে আমার ওপর হামলা চালায়। তাৎক্ষণিক আমি উপদেষ্টার গাড়ির সামনে গিয়ে বিষয়টি ওনাকে অবহিত করি। তিনি প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেন। হামলাকারীরা আমাকে বেধড়ক মারধর করে আমার মুঠোফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। থানায় মামলা করার পর জামিনে এসে পুনরায় আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এখন আমি প্রাণনাশের হুমকিতে বাড়ি যেতে পারছিনা।    

কাদের মির্জার জলদস্যু জালাল বাহিনীর যত অপকর্ম: গত ৭ বছর মুছাপুর ক্লোজার সংলগ্ন নদীতে বেপরোয়া কাদের মির্জার জলদস্যু জালাল বাহিনী। একই সাথে তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। এ বাহিনীর প্রধান ছিল জলদস্যু জালাল ও তার ভাই জাহাঙ্গীর মেম্বার। ইতিমধ্যে কাদের মির্জা ও তার স্ত্রী আক্তার জাহান বকুলের সাথে এদের অনেক ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২২ সালের শুরুর দিকে উপজেলার মুছাপুর ক্লোজারে ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে ৬০০ একর সরকারি খাসজমি দখল করে বসত ভিটা নির্মাণের অভিযোগ উঠে জলদস্যু জালাল ও তার বড় ভাই স্থানীয় মেম্বার আলী আজগর জাহাঙ্গীর বাহিনীর বিরুদ্ধে। এরপর একই এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে অন্তত ৫০ কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে এই বাহিনী। এরপর ব্যাপক আলোচনায় আসে দলদস্যু জালাল বাহিনী। ২০২৩ সালের শেষের দিকে র‍্যাবের হাতে জালাল আটক হলেও মির্জার তদবিরে ছাড়া পেয়ে যায়।

এ স্থানীয়দের অভিযোগ, জলদস্যু জালাল বাহিনীর সকল সদস্যের কাছে ভারি অস্ত্র রয়েছে। মুছাপুর ক্লোজার ঘাট মাছ ব্যবসায়ীদের থেকে দৈনিক মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে। আর মির্জার বাড়িতে যেত ফ্রি মাছ। অভিযোগ রয়েছে, ৪ আগসট বিকেলে জালাল বাহিনী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কাদের মির্জাকে খুশি করতে মিছিল বের করে। কিন্ত ভোল পাল্টে ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় জালাল বাহিনী বিএনপির মিছিলও করে। এখন তারা স্থানীয় বিএনপিতে মিশে একাকার। কাদের মির্জা ও মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীকে ৫ আগস্ট পরবর্তী পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দেয় এই বাহিনী। স্থানীয়রা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানান।    

মুছাপুর রেগুলেটর তলিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে: নোয়াখালীর সাবেক জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের যোগসাজশে সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে ডাকাতিয়া নদী এলাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে। বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করত জলদস্যু জালাল বাহিনী। এর ফলে উজানের পানির চাপে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে তলিয়ে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। রেগুলেটর ভেঙে তলিয়ে যাওয়ার পর এলাকাবাসী কাদের মির্জার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। তবে এখনো অধরা রয়ে গেছে কাদের মির্জার জলদস্যু বাহিনী। জলদস্যু জালাল বাহিনী বীরদর্পে খোলস পাল্টে ভিন্ন রুপে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভয়ে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয়রা কথা বলতে নারাজ।    

খাস জমি উদ্ধারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা: ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে মুছাপুর ক্লোজার ঘাট এলাকায় জেগে ওঠা চরে খাস জমি জবর দখল থেকে উদ্ধার করতে গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত হয় ভূমি অফিসের ৩ কর্মচারী। এই হামলার নেতৃত্বে ছিল জলদস্যু জালাল বাহিনী। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মুছাপুর ক্লোজার সংলগ্ন জেগে উঠা চরে খাস জমিতে জলদস্যু জালাল বাহিনী ভেকু মেশিন দিয়ে ঘরের ভিটি তৈরি করে জবর দখল করে। ওই জায়গায় প্রায় ১২০০শ’ একর জমিতে কথিত ৬শ’ ভূমিহীন পরিবারকে কোটি টাকার বিনিময়ে কাদের মির্জা ও মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর ছত্রছায়ায় ঘর নির্মাণ করে দেয় জলদস্যু জালাল বাহিনী।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও জলদস্যু জালালের ভাই আলী আজগর জাহাঙ্গীর  অভিযোগ নাকচ করে বলেন, তারা মির্জার সাথেও ছিলেননা। বিএনপির সাথেও নেই। বালু উত্তোলন ও খাসজমি দখলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অনেক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা এটার প্রতিবাদও জানিয়েছি।  কৃষক মিজানের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। আমরা জামিন পেয়েছি।

তবে অভিযোগের বিষয়ে জলদস্যু জালাল বাহিনীর প্রধান জালালের দুটি মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর তার হোয়াটসঅ্যাপে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।    

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, কৃষকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে।    পরবর্তীতে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]