খাস কলকাতায় বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের হোস্টেলে নাবালিকাদের উপর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি ঘটেছে হরিদেবপুর থানা কেওড়াপুকুরে। চার ছাত্রীর অভিভাবক তাদের সঙ্গে দেখা করতে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে হস্টেলের মহিলা ওয়ার্ডেন সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস।
পলাতক মূল অভিযুক্তকে ধরতে গুজরাতে রওনা দিয়েছে পুলিসের টিম।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিদেবপুর থানার কাছে ওই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের হস্টেলটি রয়েছে। সেখানে জনা ২৭ ছাত্রী থাকে। তাদের বয়স তেরো থেকে চোদ্দর মধ্যে। হস্টেলের মহিলা ওয়ার্ডেন সুপ্রিয়া সিং নাবালিকাদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। হস্টেলের বাকি কর্মীরাও মহিলা। পুলিস জেনেছে, সুপ্রিয়া কিছুদিন আগে বিয়ে করেন। তাঁর স্বামী সুপ্রভাত দলুই আগস্ট মাস থেকে এই হস্টেলে থাকতে শুরু করেছে। স্বামী সঙ্গে থাকছে এই বিষয়টি ওই মহিলা ওয়ার্ডেন স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাননি। সুযোগ বুঝে অভিযুক্ত সুপ্রভাত প্রথমে নাবালিকাদের শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। তারা প্রতিবাদ করলে ভয় দেখানো হয়। ওয়ার্ডেন জানায় এটা বাইরে প্রকাশ করলে সকলকেই হস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হবে। উল্টে স্বামীর কাজে মদত দেয় বলে অভিযোগ। তাই প্রথমে কেউ মুখ খোলেনি। এরপর তাদের উপর যৌন নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনের স্বামীর সঙ্গে যোগ দেয় ইংরেজির প্রাইভেট টিচার বিশ্বনাথ শীল ও তাঁর সহযোগী শোভন মণ্ডল। তিনজনে মিলে প্রতিদিন ছাত্রীদের উপর যৌন নিগ্রহ করত বলে অভিযোগ। এক একদিন একজন ছাত্রীর ডাক পড়ত। অভিযোগ, শেষ তিন-চারদিন এই তিন অভিযুক্ত মিলে ধর্ষণ করে চার ছাত্রীকে। এতে সকলের শরীর খারাপ হয়ে যায়। চার ছাত্রী সিদ্ধান্ত নেয়, রবিবার পরিবারের লোকজন দেখা করতে গেলে গোটা ঘটনা জানাবে।
রবিবার দেখা করতে আসেন তাদের মা-বাবারা। প্রথমে এক ছাত্রী তার মাকে শ্লীলতহানি ও ধর্ষণের কথা জানায়। সেই সঙ্গে ওয়ার্ডেনের মদতে ঘটনা ঘটছে বলে উল্লেখ করে। আরও তিন ছাত্রী একই কথা বলে তাদের বাড়ির লোকজনকে। ঘটনা জানাজানি হতেই হস্টেলের সামনে ভিড় জমে যায়। তাঁরা তাদের মেয়েদের বাড়ি নিয়ে যেতে উদ্যেগী হন। ওই ছাত্রীদের পরিবারের তরফে যোগাযোগ করা হয় স্কুলের ফাদারের সঙ্গে। তিনি সমস্ত ঘটনা শোনার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। তাঁরাই তাঁকে নির্দেশ দেন, থানায় লিখিত অভিযোগ করতে। তার ভিত্তিতে তিনি মহিলা ওয়ার্ডেন তাঁর স্বামী সহ চারজনের বিরুদ্ধে রবিবার রাতেই থানায় অভিযোগ করেন। ঘটনার পরই সেখান থেকে পালিয়ে যায় ওয়ার্ডেনের স্বামী। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে। তার ভিত্তিতে হরিদেবপুর থানা হস্টেল থেকেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পলাতক অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।