নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিলের নেপথ্যে অভ্যাগতের তালিকায় আ.লীগ নেতাকর্মীর নাম


ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 20-09-2024

নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিলের নেপথ্যে অভ্যাগতের তালিকায় আ.লীগ নেতাকর্মীর নাম

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা কী কারণে বতিল করা হয়েছে, এ নিয়ে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে চলছে নানা গুঞ্জন। ম্যানহাটনের টাইমস স্কয়ার সংলগ্ন ম্যারিয়ট মারক্যুইস হোটেলের বলরুমের সীমিত আসনে অধিক সংখ্যক যোগদানেচ্ছু প্রবাসীদের নামের কথা উলেখ করে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ পেলেও তাঁর নাগরিক সংবর্ধনা বতিলের মুল কারণ হিসেবে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভ্যাগতের তালিকায় পাওয়া গেছে প্রচুর সংখ্যক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নাম। তাই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই বাতিল করা হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা প্রস্তুতি শুরুর পর থেকে অদ্যাবদি নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে অভ্যাগতদের তালিকা পাঠানো হয় নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেলের কার্যালয়ে। ৬০০ আসন বিশিষ্ট বুকিং দেওয়া ম্যারিয়ট মারক্যুইস হোটেলের বলরুমে অভ্যাগতদের তালিকা জমা পড়েছে ২ হাজার ২ শতেরও বেশি। বিভিন্ন মাধম্যে সেই তালিকার যুক্ত হয়েছে প্রচুর সংখ্যক আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নাম। এছাড়াও সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন দল ও সংগঠন টানাহ্যাঁচড়া শুরু করলে বিরুপ প্রতিক্রয়া দেখা দেয়। এতে বিব্রত হয়ে পড়েন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। এ পরিস্থিতিতে তারা ঢাকায় বার্তা পাঠান। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল করা হয়েছে বলে সূত্রটি উল্লেখ করেন।  

এদিকে, অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে নিউ ইয়র্কের বেশ কয়েকটি গোষ্ঠি রীতিমত চাঁদাবাজিও শুরু করেন, যা গত ১৬ বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনা প্রদানকালে আওয়ামীলীগের চাঁদাবাজিকেও হার মানিয়েছে। নিউ ইয়র্কে প্রতিবার শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ ডলার কামিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।

তবে এবারে ড. ইউনুসের ঘনিষ্ঠ দাবি করে এক সাংবাদিক একধাপ এগিয়ে ছিলেন। তিনি প্রচার করে বেড়ান ড. ইউনুস নাকি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো। নাগরিক সম্বর্ধনায় ও প্রেস কনফারেন্সে শুধু তার টিভির ক্যামেরা ছাড়া অন্য কোন ক্যামেরা রেকর্ড করতে পারবে না। তিনিই সব করবেন এমন কথাই শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়টিও বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে নিউ ইয়র্কে।

উল্লেখ্য, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিব্র সন্ধ্যায় ম্যানহাটনের টাইমস স্কয়ার সংলগ্ন ম্যারিয়ট মারক্যুইস হোটেলের বলরুমে সরকারিভাবেই তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ছিল। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল যৌথভাবে উক্ত অনুষ্ঠান আয়োজন চূড়ান্ত করেছিলেন। নাগরিক সংবর্ধনা বাতিলের কথা স্বীকার করেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেন ৬০০ আসন বিশিষ্ট বুকিং দেওয়া ম্যারিয়ট মারক্যুইস হোটেলের বলরুমে অভ্যাগতদের তালিকা জমা পড়েছে ২ হাজার ২ শতেরও বেশি। এর মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদেরও নাম এসেছে। এ নিয়ে আমরা খুবই বিব্রত অবস্থায় আছি। আমরা চাই না বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক।  

আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর নাগরিক সংবর্ধনা নিয়ে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন মহলের টানাহ্যাঁচড়া শুরু হয়। প্রায় প্রতিদিনই চলছিল পাল্টাপাল্টি সভা ও সংবাদ সম্মেলন। নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন সংগঠন প্রধান উপদেষ্টার নাগরিক সংবর্ধনা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করলেও কাউকে দেওয়া হয়নি কোন অনুমতি।

নাগরিক সংবর্ধনার জন্য হোটেল বুকিংয়ের জন্য মোটা অংকের অগ্রিম অর্থও প্রদান করা হয় হোটেল কর্তৃপক্ষকে। এরই মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন সংগঠনের মাঝে শুরু হয় নানা তোরজোড়। বিএনপিপন্থী ভুঁইফোঁড় নাগরিক সমাজ, জামাত-বিএনপি আর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে পরিচালিত বাংলাদেশ সোসাইটিসহ বিভিন্ন মহল ধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা দিতে মরিয়া হয়ে উঠে। বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় সেপ্টেম্বরলীগ খ্যাত যূক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ। বিভিন্ন দল ও সংগঠন টানাহ্যাঁচড়া শুরু করলে দেশ ও প্রবাসে বিরুপ প্রতিক্রয়া দেখা দেওয়ার ফলে নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল করা হয়।

অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বতিল হওয়ায় হোটেল বুকিংয়ের জন্য মোটা অংকের অর্থ গচ্ছা দিতে হচ্ছে সরকারকে। প্রায় দুই তিন আগে হোটেল বুকিংয়ের জন্য অগ্রিম অর্থ প্রদান করা হয় হোটেল কর্তৃপক্ষকে। তবে সমুদয় অর্থ ফেরত পবার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে কিছুটা হলেও ফেরত পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]