সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী জাদুকাটায় অভিযানের পরও চলছে মহাতান্ডব


মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া (সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি): , আপডেট করা হয়েছে : 17-09-2024

সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী জাদুকাটায় অভিযানের পরও চলছে মহাতান্ডব

সুনামগঞ্জের বহুল আলোচিত সীমান্ত নদী জাদুকাটায় অভিযানের পরও চলছে মহাতান্ডাব। অবৈধ ভাবে এই নদীর দুই তীর কেটে বালি ও পাথর বিক্রি করে রাতারাতি অনেকেই হয়েগেছে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। অন্যদিকে বসত-বাড়ি ও জায়গা-জমিসহ সব হারিয়ে শতশত পরিবার হয়েছে নিঃস্ব, ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে রাস্তাঘাট। এছাড়াও নদী তীর কাটা নিয়ে সংঘর্ষে এপর্যন্ত অর্ধশতাধিক লোকের হয়েছে মৃত্যু। স্থানীয় এক সাংবাদিককে করা হয়েছে নির্যাতন। এসব নিয়ে থানা ও আদালতে হয়েছে অনেক মামলা। এতকিছুর পরও মূল-হোতারা এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি।

গত রবিবার (১৫ সেপ্টেম্ভর) দিনব্যাপী টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান চালিয়ে জাদুকাটা নদীর তীর কাটার সময় ২৫জন শ্রমিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ৬জনকে ২১দিনের ও ১৯জনকে ৩মাসের কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। তারপরও থেমে নেই বালি খেকো চক্রের মূলহোতা ও তাদের বাহিনী।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের মৃত বদ মিয়া ছেলে তোতলা আজাদ জাদুকাটা নদীর তীর সংলগ্ন একই ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম, মানিগাঁও, গড়কাটি ও গাগটিয়া গ্রামের মোশালম মিয়া, খাইয়রুল মিয়া, নুরজামাল, আলীম উদ্দিন, মুজিবুর মিয়া, দিন ইসলাম, মাহমুদ আলী শাহ, আবুল আহাব গংদের নিয়ে একটি বাহিনী তৈরি করেছে। অন্যদিকে গাগটিয়া এলাকার রানু মিয়া ও মোশারফ মিয়া গ্রæপের রয়েছে পৃথক বাহিনী। তারা ৩ বাহিনী মিলে গত ৮বছর যাবত জাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালি বিক্রি করাসহ নদীর তীর সংলগ্ন আদর্শগ্রাম ও ঘাগটিয়া এলাকায় গভীর পাথর কোয়ারী (মৃত্যুকূপ) তৈরি করে পাথর বিক্রি করে প্রত্যেকে হয়েছে কোটিকোটি টাকার মালিক। এই অবৈধ বালি ও পাথর বাণিজ্য নিয়ে ৩ বাহিনী কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তাই বালি ও পাথর বাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দের জের ধরে, সম্পতি তোতলা আজাদ বাহিনীর সদস্য মুজিবুর মিয়ার ছেলেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিল মোশারফ বাহিনীর সদস্যরা। এনিয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার আগে জাদুকাটা নদীর অবৈধ কর্মকান্ডের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক সংবাদ এর তাহিরপুর প্রতিনিধি কামাল হোসেনকে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন করে তোতলা আজাদ ও তার বাহিনী। এঘটনার পর সারাদেশ ব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়,দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করে সাংবাদিক সমাজ। এঘটনার পেক্ষিতে নির্যাতিত সাংবাদিকের দায়েরকৃত মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। এছাড়াও তোতলা আজাদের চোরাচালান, চাঁদাবাজি ও সকল অন্যায় বন্ধ করাসহ তার প্রায় ২০কোটি টাকার অবৈধ অর্থ-সম্পদ জব্দ করে সরকারের হেফাজতে নেওয়ার জন্য গত আগষ্ট মাসে ৭দিন ব্যাপী পৃথক ভাবে, তাহিরপুর উপজেলা সদরসহ এউপজেলার আনোয়ারপুর, বাদাঘাট, বড়ছড়া, বালিয়াঘাট ও চারাগাঁও এলাকায় হাজার হাজার ভোক্তভোগী জনসাধানণ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। তারপরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি জোড়ালো কোন পদক্ষেপ। এরফলে যত দিন যাচ্ছে তোতলা আজাদ ও তার বাহিনীর সদস্য বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার বালি বিক্রি করে। তাদের কারণে জাদুকাটা নদীর তীরবর্তী প্রায় আধা কিঃমিটার পাকা সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হওয়াসহ প্রায় সহশ্রাধিক পরিবার ইতিমধ্যে নিঃস্ব হয়েগেছে বলে জানা গেছে। 

এব্যাপারে নির্যাতিত সংবাদিক দৈনিক সংবাদ এর তাহিরপুর প্রতিনিধি কামাল হোসেন বলেন- তোতলা আজাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে আমার দায়েরকৃত মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে। কিন্তু জাদুকাটা নদীর তীর কাটা বন্ধ হয়নি। বালি খেকোরা এখনও রয়েছে বহাল তবিয়তে। তাহিরপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শামস সাদাত মাহমুদ উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান-আইন অমান্যকে জাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালি উত্তোলনের অপরাধে ২৫জনকে বালি ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাঘারে পাঠানো হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।         


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]