শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ এগিয়েছে। সভ্যতার অগ্রগতি হয়েছে। জঙ্গল থেকে মানুষ বাড়ি বানিয়েছে, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে। তবুও সমাজের কিছু অংশ আছে যারা তাদের পুরানো রীতিনীতি ও ঐতিহ্যকে আকড়ে বাঁচতে পছন্দ করে। প্রযুক্তি থেকে তারা শতযোজন দূরে।
প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে যে কতটা সহজ করে দিয়েছে , তা তারা জানে না।
এরা উদ্ভাবন করেনি প্রযুক্তির, আপন করে নেয়নি তাকে। এখনও পড়ে আছে কেবল তাদের পুরানো রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে। এদের নিয়ে আলোচনাও কম করা হয়। হয়ত এরকম অনেক প্রজাতির সন্ধান সভ্য জগতের মানুষের কাছেও নেই।
আজ কথা বলব সেন্টিনেলিজ উপজাতিকে নিয়ে। এই জনগোষ্ঠী দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম। এরা বঙ্গোপসাগরের তীরে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে। এই জাতি বহির্জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পছন্দ করে না, এমনকী আধুনিক সমাজের সঙ্গে মিশে যেতেও মারাত্মক অপছন্দ তাদের। জঙ্গলে নিভৃতে বসবাস করতে ভালোবাসে তারা। যে দ্বীপে এরা থাকে সেই দ্বীপটি লম্বায় পাঁচ মাইল আর চওড়ায় সাড়ে চার মাইল। এই দ্বীপে ঢোকা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। দ্বীপের চারপাশে নৌবাহিনী টহল দেয়। বনে ঘুরে শিকার করে এবং জল থেকে মাছ ধরে খায় এই প্রজাতি। এই উপজাতির মহিলারা কোমরে, ঘাড়ে এবং মাথায় ফেট্টি বাঁধেন এবং পুরুষেরা লতাপাতা দিয়ে কোমরে বেল্ট ও গলায় হার পরেন। বিদেশী দেখলেই তারা তীর ছুড়ে আক্রমণ করত। ১৭৭১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি জাহাজ প্রথম এদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়। পরপর কয়েকবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে গেলে প্রাণ হারাতে হয় অনেককে।
এদের সম্পর্কে একটি চমৎকার তথ্য জানা যায়, এরা নাকি বালতি পছন্দ করে। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। বিশেষ করে, লাল বালতি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল একবার দ্বীপে ঢুকতে গেলে প্রাচীন ওই গোষ্ঠী তীর ছুঁড়ে গুলি করেনি। দ্বীপের তুলনামূলকভাবে কাছাকাছি ওই দল পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা তখন প্রচুর শূকর আর লাল এবং সবুজ রঙের বালতি উপহার দিয়েছিল। দেখা যায়, সেন্টিনেলিজ উপজাতিরা লাল বালতিগুলো নিয়ে গেলেও সবুজগুলো তীরে ফেলে রেখে গিয়েছিল। সঙ্গে শুয়োরগুলিকে তীরেই কবর দিয়েছিল।