যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় করার বিষয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। একদিকে মার্কিন অস্ত্র ক্রয় করার পূর্বশর্ত জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) চুক্তিটি আগামী বছরের মধ্যে শেষ করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ । অন্যদিকে রাশিয়া থেকে উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র ক্রয় করা হলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনা করেছে ঢাকা। মোটা দাগে ফোর্সেস গোল ২০৩০ অধীনে সমরাস্ত্র সংগ্রহের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক আলোচনার ভালো সূচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন অস্ত্র ক্রয় করলে অবশ্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে বাংলাদেশ যদি রাশিয়ার কাছ থেকে উন্নতমানের অস্ত্র কেনে, তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ করার প্রয়োজন আছে।
তিনি বলেন, জিসোমিয়া চুক্তি ছাড়া আধুনিক মার্কিন অস্ত্র ক্রয় করা যাবে না। সেটি নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে ভালো আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কিনলে কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভারসারিস থ্রু স্যাংকশনস অ্যাক্ট বা ক্যাটসা আইনে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কার বিষয়টিও নিয়ে আলাপ করেছে বাংলাদেশ।
৬ এপ্রিল দিনভর ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন মাসুদ বিন মোমেন এবং মার্কিন পক্ষে ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনিস জেনকিনস। এর আগে দুই দেশের মধ্যে সাত বার নিরাপত্তা সংলাপ হলেও এবারেই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহে এই সংলাপ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে হচ্ছে।
উভয় সংকট
যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র তৈরি করে। কিন্তু দাম বেশি এবং ওইদেশ থেকে কিনলে অনেক শর্ত মেনে কিনতে হবে। আবার রাশিয়া সুলভে উন্নত মানের সমরাস্ত্র সরবরাহ করে। কিন্তু ওইদেশ থেকে অস্ত্র কিনলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা তৈরি হয়। এই উভয় সংকট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ক্যাটসা আইনের বিষয়ে ছাড় পাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করা হয়।
এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ক্যাটসা একটি রাজনৈতিক অস্ত্র এবং এটি কখন এবং কীভাবে ব্যবহার করা হবে সেটি মার্কিন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে এস-৪০০ সমরাস্ত্র ক্রয় করার জন্য তুরস্কের উপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও একই অস্ত্র ভারত ক্রয় করলেও কোনও নিষেধাজ্ঞা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ভারতের মোট অস্ত্রের ৪০ শতাংশ রাশিয়া সরবরাহ করলেও কোনো ধরনের প্রতিবন্ধতায় নেই দেশটি।
উল্লেখ্য, ক্যাটসা হলো এমন একটি মার্কিন আইন যার অধীনে ইরান, উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের লেনদেন বিশেষ করে সামরিক লেনদেন করলে যুক্তরাষ্ট্র ওই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে উন্নতমানের মাল্টি রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট সুকোই প্লেন বা অন্যান্য সমরাস্ত্র কেনার জন্য আলোচনা চালাচ্ছে।
জিসোমিয়া
মার্কিন অস্ত্র ক্রয় করার পূর্বশর্ত জিসোমিয়া এবং এই চুক্তি করার জন্য ঢাকা ও ওয়াশিংটন আলোচনা করছে। মোট পাঁচটি ধাপে এই চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং বর্তমানে তৃতীয় ধাপের আলোচনা চলছে।
এরমধ্যে প্রথম ধাপটি হচ্ছে চুক্তি করার জন্য দুই দেশের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা; দ্বিতীয়ত উভয় দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করার জন্য প্রতিনিধি দলের একাধিক সফর এবং তৃতীয়ত এই চুক্তি করার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা আইন আছে কিনা বা নতুন আইন করার দরকার আছে কিনা সেটি নির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন। এর পরবর্তী ধাপে চুক্তি করার জন্য সহায়ক সবকিছু বিদ্যমান আছে সেটির চূড়ান্ত পর্যালোচনা এবং পঞ্চম ধাপে চূড়ান্ত আলোচনা এবং স্বাক্ষর।
ওয়াশিংটনে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আগামী বছরের মধ্যে জিসোমিয়া চূড়ান্ত করা যাবে বলে আমরা আশাবাদী।
এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন অস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়তা দেখাতে রাজি আছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে সহজ কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ বা কম সুদের হারসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় রাজি আছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহীর সময় / এম আর