হাহুতাশ ভারতের পর্যটন শিল্পে


আন্তর্জাতিক ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 20-08-2024

হাহুতাশ ভারতের পর্যটন শিল্পে

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ল ভারতের পর্যটন শিল্প। ভারতের পর্যটন বাজারের ২৩ শতাংশই আসে বাংলাদেশি ভ্রমণার্থীদের হাত ধরে। চিকিৎসার প্রয়োজন তো আছেই, এছাড়া, দুর্গাপুজোর আগে বা বিয়ের কেনাকাটা করতে এবং বেড়ানোর জন্য প্রতি বথর প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি পর্যটকরা আসেন ভারতে।

ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের বহু মানুষের আত্মীয়স্বজনও থাকেন। তাঁরাও ভারতে আসেন আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে। তবে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারণে এই বাংলাদেশি পর্যটকদের অধিকাংশই উধাও হয়ে গিয়েছে। ট্রাভেল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কর্তারাও জানিয়েছেন, গত দেড় মাসে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া পর্যটকদের সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ কমেছে। এর সঙ্গে একমত ভারতের ট্রাভেল অপারেটররাও।

জুলাই মাসের শুরু থেকেই শুরু হয়েছিল কোটা বিরোধী আন্দোলন। ক্রমে তা হিংসাত্মক রূপ নেয়। সেই সময় থেকেই ভারতে আসা কমে গিয়েছিল বাংলাদেশিদের। সপ্তাহ দুয়েক আগে, ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এতে সংকট আরও বেড়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে ব্যাঘাত ঘটেছিল বিমান চলাচলের। চিকিৎসার উদ্দেশ্য ছাড়া বাংলাদেশিদের সমস্ত ভিসা বাতিল করা হয়। বিমান চলাচল ফের শুরু হয়েছে। তবে, বিমানের ‘লোড ফ্যাক্টর’ অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। অর্থাৎ, বিমান চললেও লোক হচ্ছে না।

ইকোনমিক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ডিরেক্টর, মহম্মদ তসলিম আমিন শোভনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্যই হল ভারত। বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যান, তাদের ৪০-৪৫ শতাংশই ভারতে পাড়ি দেন। এর ৮০ শতাংশর বেশি যান চিকিৎসার জন্য। ১৫ শতাংশ যান কেনাকাটা করতে, ৫ শতাংশ যান অবকাশ কাটাতে। কলকাতা হল বাংলাদেশিদের পছন্দের কেনাকাটার জায়গা। অন্যদিকে সিকিম-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি এবং কাশ্মীর, আগ্রা ইত্যাদি তাদের অন্যতম পছন্দের ভ্রমণস্থল।

কোভিড মহামারির সময়, সারা বিশ্বেই ক্ষতির মুখে পড়েছিল পর্যটন শিল্প। ভারত-বাংলাদেশ পর্যটনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ২০২৩-এ ভারতে পর্যটকদের সংখ্যা ৪৩.৫ শতাংশ বেড়েছে। তা সত্ত্বেও মহামারির আগেয় জায়গায় পৌঁছতে পারেনি পর্যটন শিল্প। ১৫.৫ শতাংশ ঘাটতি এখনও রয়ে গিয়েছে। ৯২.৩ লক্ষ বিদেশি পর্যটক পা রেখেছিলেন ভারতে। এর থেকে ২৪,৭০৭ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছিল ভারত। বিদেশিদের মধ্যে সবথেকে বেশি ছিল বাংলাদেশিরাই, মোট বিদেশি পর্যটকের ২২.৫ শতাংশরও বেশি।

মূলত, বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্যই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালগুলির কাছাকাছি ব্যবসা পরিচালনা করে বিভিন্ন ট্র্যাভেল অপারেটর, হোটেল মালিক এবং গেস্ট হাউস মালিকরা। ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এই ব্যবসায়ীরা মাঠি তাড়াচ্ছেন। বাংলাদেশে সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ কমেছে। সামনেই দুর্গাপুজো। প্রতি বছর পুজোর এক মাস আগে, কলকাতার বিভিন্ন হোটেলগুলিতে ১০০ শতাংশ বুকিং থাকে। কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ অতিথিই থাকেন বাংলাদেশি। তাঁরা মূলত কেনাকাটা করতে আসেন। কিন্তু, অধিকাংশ হোটেলে আগামী দুই মাসের জন্য প্রায় সমস্ত বুকিং বাতিল করেছেন বাংলাদেশি পর্যটকরা। পাঁচতারা হোটেল থেকে শুরু করে ছোট ছোট গেস্ট হাউস এবং হোটেল এবং দোকানের মালিকরাও এই চাপ অনুভব করছেন।

২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছিলেন ৩,০৪,০৬৭ জন মানুষ। ২০২৩-এ এই সংখ্যা ৪৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছিল ৪,৪৯,৫৭০-এ। কলকাতার মেডিকেল ট্যুরিজম সংস্থা, ‘ইন্ডিয়াট্রিটমেন্টস ডটকমে’র সিইও তথা প্রতিষ্ঠাতা, সমিত বেজকে উদ্ধৃত করে ইকোনমিক টাইমস বলেছে, প্রতি মাসে তাঁদের সংস্থার মাধ্যমে যেখানে কমপক্ষে ১৫০ জন বাংলাদেশি ভারতে আসতে, সেখানে এই সংখ্যা এখন মাত্র পাঁচ বা ছয় জন রোগীতে নেমে এসেছে। মণিপাল হাসপাতালের ইন্টারন্যাশনাল হেলথ কেয়ারের চিফ ম্যানেজার, রামগোপাল বর্ধনও জানিয়েছেন, তাঁদের বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা প্রতি মাসে ১৭০০-২০০০ থেকে এখন মাত্র কয়েকশতে নেমে এসেছে। তবে, ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। তবে, এই বছর পর্যটন থেকে ভারতের রাজস্বের একটা উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হতে চলেছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]