নেই ট্রেন চলাচল, নেই বেচাকেনা ধারদেনাসহ পুঁজি ভেঙে দিনাতিপাত


কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : , আপডেট করা হয়েছে : 08-08-2024

নেই ট্রেন চলাচল, নেই বেচাকেনা ধারদেনাসহ পুঁজি ভেঙে দিনাতিপাত

দীর্ঘ ২০দিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ। নেই স্টেশনে সেই চিরচেনা দৃশ্য। নেই যাত্রীদের ওঠা-নামা কিংবা বিকেল হলেই তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের প্রশান্তির খোঁজে আসা। তাইতো একপ্রকার জনশূন্য শশ্মানে পরিণত হয়েছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন। আর এতেই বন্ধ হয়েছে প্লাটফর্মসহ স্টেশন সংলগ্নে থাকা বিভিন্ন ক্ষুদ্র দোকানীর আয়ের পথ। বর্তমানে পুঁজি শেষ করে ধারদেনায় চলছে তাদের দিনাতিপাত।

সরেজমিনে ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে দিয়ে দেখা যায়, স্টেশন যাত্রী ও মানবশূন্য থাকায় স্থানীয়রাসহ স্টেশনের প্লাটফর্মের ওপর এবং স্টেশন সংলগ্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাত্রীদের বসার আসনে মোবাইলে লুডু খেলছেন। আবার কেউ কেউ গল্পগুজব করছেন। প্লাটফর্মে যাত্রী সাধারণ না থাকালেও বর্তমানে অবস্থান নিয়েছে এলাকার ব্যক্তি বিশেষের পালিত বেশ কিছু ছাগল। প্লাটফর্মে রিকশা-ভ্যান রেখে বিশ্রাম নিচ্ছেন চালক। বেচাবিক্রির আশায় দুইজন পানবিড়ির দোকান খুলে বসে আছেন খদ্দেরের আশায়। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশন মাস্টারসহ অন্যান্য কর্মচারিরা স্টেশন মাস্টারের কক্ষ বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করছেন।

কথা হয় ফুলবাড়ী পৌরএলাকার খালাসিপাড়া গ্রামের মৃত সোলাইমান আলীর ছেলে স্টেশনের প্লাটফর্মের টিকিট কাউন্টার সংলগ্ন এলাকার পানবিড়ি বিক্রেতা মাহামুদ আলমের সঙ্গে।

তার সাথে কথা চলাকালিন তিনি বলেন, ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন প্লার্টফর্মে পিতার রেখে যাওয়া পানবিড়ির ক্ষুদ্রব্যবসা ৩০ বছর ধরে চালিয়ে আসছেন। এই ব্যবসার আয় দিয়েই চলে চার সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ। ট্রেন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলে পান-বিড়ি বিক্রি করে তার আয় হয়, দিন ভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। কিন্তু ১৯ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসাও তার বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব পান দোকানে ছিল তার সবটাই পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিড়ি ও সিগারেটগুলো। ব্যবসা বন্ধ থাকায় এলাকার দোকানগুলোও বাকিতে খাদ্যপণ্য দিচ্ছে না। বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষের কাছে ঋণ-দেনা করে পরিবারের খাবার জোগান দিতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে যেটুকু পুঁজি ছিল সেটি শেষ হয়ে গেছে। ট্রেন চলাচল শুরু হলে দোকানের মালামাল কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মাহামুদ আলম।

প্লাটফর্মের ওপরের আরেক ক্ষুদ্র পান দোকানি নূরু মিয়া বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পান-বিড়ির বিক্রির ব্যবসা করছেন। স্ত্রীসহ তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছয় সদস্যের তার সংসার। বড় ছেলে হৃদয় হোসেন ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকরি করে। দ্বিতীয় ছেলে নাহিদ হোসেন ও তৃতীয় ছেলে জয় হোসেন পিতার অনুপস্থিতিতে ব্যবসা চালায়। এরমধ্যে জয় হোসেন এইচএসসি শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং মেয়ে রোজা আক্তার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের ভরণ পোষণ করা কঠিন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই ধার-দেনায় ডুবে গেছেন, ব্যবসার পুঁজিও শেষ হয়ে গেছে। খেয়ে না খেয়ে চলছে সংসার। তবে দ্রুত ট্রেন চলাচলা শুরু হলে এই দুর্যোগ কেটে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

শুধু মাহামুদ আলম ও নূরু মিয়া নয়, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্লাটফর্মের ক্ষুদ্র চা দোকানী কোরবান আলী, আব্দুস সালাম, পান দোকানী নজমুল হক, চা দোকানী মিলন শেখ, পেপার ও পুস্তক বিক্রেতা ফারুক হোসেন, পান দোকানী আকবর আলী, পান দোকানী বাবু মিয়া এরা সকলেই বেকার জীবনযাপন করছেন। খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। সকলেই এ মুহুর্তে ঋণ-দেনাসহ ব্যবসার পুঁজি খেয়ে ফেলেছেন। তবে ট্রেন চলাচল শুরু হলে তারা সকলেই এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবেন বলে জানান। তারা আরো বলেন, গত মাসেই প্লাটফর্মে থাকা দোকানগুলোর অনেককেই বৎসরিক লীজ ফি ৩ হাজার ৭৫০ দিতে হয়েছে। এতে করে যা সঞ্চয় ছিল তাও শেষ হয়েছে। কিন্তু কে জানতো যে দেশের এই পরিস্থিত হবে আর রোজগানের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. ইস্রাফিল ইসলাম বলেন, ১৯ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তার অলস সময় কাটছে কর্মচারিদের নিয়ে। ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টেশনের প্লাটফর্মে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা খুব বিপদে পড়েছেন। তারাও প্রতিদিন সকাল থেকে স্টেশনে এসে অলস সময় পার করছেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]