ঠাকুরগাঁওয়েরজগদল সীমান্তে শত ক্ষতিগ্রস্ত, নির্যাতিত হিন্দু নারী-পুরুষ ভারতে প্রবেশের চেষ্টা


হুমায়ুন কবির, রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 08-08-2024

ঠাকুরগাঁওয়েরজগদল সীমান্তে শত ক্ষতিগ্রস্ত, নির্যাতিত হিন্দু নারী-পুরুষ ভারতে প্রবেশের চেষ্টা

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের জগদল সীমান্তে  বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ভারতে প্রবেশের জন্য ভিড় জমাতে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীর শত শত শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ নারী-পুরুষ। কাটা তারের বেড়ার কাছাকাছি পৌঁছানোর পূর্বেই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে নিজ দেশের জগদল বিজেপি ক্যাম্প সংলগ্ন পরিত্যক্ত জগদল রাজবাড়ী চত্বরে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে এ উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের জগদল ট্যামকাভিটা, করোলডুবা, কামারটলি, কাশিডাঙ্গা, ঝাপরটলা, ছভাগিয়া, গহিলাপাড়া, নুনতোর হিন্দুপাড়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ চালাতে থাকে ওই ইউনিয়নের একদল দূর্বৃত্ত। এহেন বর্বর হামলা, নির্যাতন, জমি দখল ও প্রাণ নাশের হুমকি সহ্য করতে না পেরে ৭ আগস্ট প্রায় এক হাজার সনাতন ধর্মের নারী পুরুষ জগদল এলাকার ৩৭৫ নম্বর সীমানা পিলার এলাকা দিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এদের উপস্থিতি টের পেয়ে যেন তারকাটার কাছাকাছি না আসতে পারে এজন্য আতংক সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারতের বিএসএফ'র সদস্যরা আকাশে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ার আগেই জগদল বিওপি’র বর্ডার গার্ড বিজিবি'র সদস্য, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় তাদের সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। বর্ডার থেকে ফিরে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষেরা জগদল বিজিবি ক্যাম্পের সামনে রাজবাড়ী চত্বরে সমবেত হয়। সেখানে তাদের নিজ দেশে নির্ভয়ে থাকতে ও তাদের মধ্যে আতঙ্ক দূর করতে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান,উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আহাম্মদ হোসেন বিপ্লব, কাশিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বকুল, উপজেলা পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি ছবিকান্ত বর্মন, সাধারণ সম্পাদক সাধন কুমার বসাক, প্রেসক্লাব সভাপতি মোবারক আলী, বিএনপি নেতা মাহাবুবুর রহমান, জামাতনেতা রজব আলীসহ অনেকে। এ সময় বক্তারা হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন, সেইসাথে আর যেন তাদের কোন ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন। ইউএনও তার বক্তব্যে অপরাধীদের দ্রুত বিচার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেন। পরে স্থানীয় প্রশাসন,ইউপি চেয়ারম্যান রাজনৈতিক দলের নেতাদের আশ্বাসে তারা সন্ধা ৬টায় ঘরে ফিরে যায়।

স্থানীয়রা জানান, মূলত শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর কাশিপুর ইউনিয়নের জগদল ট্যামকাভিটা এলাকার আ.লীগ নেতা প্রভাষক শিরিস চন্দ্র রায় ও প্রভাষক তাপস চন্দ্র রায়সহ অনেকের বাসায় হামলা চালায় বিক্ষুদ্ধ জনতা। এতে আ.লীগের ওই দুই নেতার বাড়ীর সমস্ত জিনিসপত্র ভেঙ্গে তছনছ করে দেওয়া হয় । বাড়ীর সমস্ত মালামাল লুট করে নেওয়ারও অভিযোগ উঠে। 

এ ঘটনার জেরে কাশিপুর ইউনিয়নসহ আশপাশ কয়েকটি গ্রামের এ সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করে। কাশিপুর ইউনিয়নের ঢোলপুকুর এলাকার বাসিন্দা শ্রী কমলা কান্ত বলেন, ৫ তারিখ থেকেই বিএনপি জামায়াতের নেতা কর্মীরা আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষদের হুমকি দিচ্ছে এলাকা ছাড়া করার। নুনতোর হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা সত্যজিত রায়,বিনয় চন্দ্র সাহা বলেন, ৫ আগস্ট থেকে বিএনপি জামায়াতের নেতাদের বিভিন্ন হুমকির কারণে তারা রাতে ঘুমাতে পারেননি।

তারা আরো বলেন, তারা হুমকি পেয়েছেন যে তাদের বাড়ীসহ জায়গা জমি দখল করে নেওয়া হবে। রাতে হামলা চালিয়ে শেষ করে দেওয়া হবে। এত হুমকি আর অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করা অযোগ্য হয়ে পড়ায় তারা ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।

এদিকে ছভাগিয়া, কামারটলি এলাকার বাসিন্দা, ছবিতা রানী ও তৃষ্ণা রায় বলেন, তারা এলাকাতে নিরাপদ নয়। তাদের এলাকার যুবতী মেয়েদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি ও শারীরিক হেনস্তা করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করে এমনটিই বলেন। অনেকের সাথে কথা বলে জনা যায় যে তাদের স্বাভাবিক চলাফেরা থেকে শুরু করে সব কাযর্ক্রম হুমকি ধামকির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে এমনকি অনেকে বাড়ী ছাড়া হয়ে রয়েছেন।

ভুক্তভোগী ও বাড়ি ছেড়ে পলাতক প্রভাষক তাপস চন্দ্র রায় মুঠোফোনে আক্ষেপ করে বলেন, না পারতেছি শান্তিমতো এদেশে থাকতে, না পারতেছি ভারতে যেতে, এ যেন নিজের স্বাধীন দেশে আমরা এক পরাধীন জাতি। পরে ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়ী পরির্দশন করেন। এসময় উপজেলা প্রশাসনের সাথে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমান ও সম্পাদক আল্লামা  আল ওয়াদুদ বিন নূর আলিফসহ বিএনপির নেতাকমির্রা উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান আরো বলেন, কোন অন্যায় সহ্য করা হবে না। যারাই দূবৃত্তয়ান করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]