সন্তানের খোঁজে সেগুনবাগিচায় সংবাদ সম্মেলন করতে এসে ডিবির হাতে বাবা-ভাই ‘গ্রেফতার’


অনলাইন ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 30-07-2024

সন্তানের খোঁজে সেগুনবাগিচায় সংবাদ সম্মেলন করতে এসে ডিবির হাতে বাবা-ভাই ‘গ্রেফতার’

ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব আইটির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাসরুর হাসানের সন্ধান চাইতে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করতে আসেন তার বাবা ও ভাই। সেখান থেকে তাদেরকে তুলে নিয়ে গ্রেফতার দেখিয়েছে ডিবি।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকেল তিনটায় ডিআরইউর সামনে থেকে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তাদের তুলে নেওয়া হয়। তাদেরকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান। তবে কোন মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তা জানাননি তিনি।

নিখোঁজ মাসরুর হাসানের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ডিআইআইটির শিক্ষার্থী মাসরুর হাসানের সন্ধান চেয়ে আজ বিকেল তিনটায় ডিআরইউর সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। সংবাদ সম্মেলন করার জন্য মাসরুর হাসানের বড় ভাই মেহেদী হাসান ও তার বাবা আবুল হাসেম রিকশাযোগে আসেন। তারা ঠিক তিনটায় ডিআরইউর সামনে নামামাত্র ডিবির কয়েকজন সদস্যরা তাদের ধরে সাদা মাইক্রোবাসে তোলেন। পরে তাদের তুলে নিয়ে গাড়িটি সেগুনবাগিচা ত্যাগ করে। এরপর গাড়িটির গন্তব্য কোথায় ছিল তা জানা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, হাসানের বাবা ও ভাই ডিআরইউ চত্বরে আসা মাত্র একজন ডিবির সদস্য তার (মাসরুর হাসান) ভাইয়ের পেছন থেকে প্যান্টের পকেট ধরে সাদা মাইক্রোবাসের দিকে নিয়ে যান। পরে তার সাথে হাসানের বাবাকেও তুলে নেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুপুর ২টার আগে ডিআরইউ চত্বরের উত্তর পাশে মোটরসাইকেল গ্যারেজের পাশে এসে সাদা রঙের একটি কালো গ্লাসের মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়। এসময় সেটির দরজা খুলে ডিবির ওয়ারী জোনের এডিসি লেলিনসহ আরও দুইজন নামেন। এরপর তারা নেমেই ডিআরইউর অফিস কোনদিকে খোঁজ করতে থাকেন। পরে ডিআরইউ অফিসের দ্বিতীয় তলায় তারা চলে যান। বিকেল তিনটায় নিখোঁজ হাসানের ভাই ও বাবা রিকশাযোগে আসা মাত্র তাদের তুলে নেয়। সেখানে ডিবির ওয়ারী জোনের এডিসি খন্দকার আরাফাত লেলিন উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে ডিবির ওয়ারী জোনের এডিসি খন্দকার আরাফাত লেলিনের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি কি দেখেছেন? তখন তাকে এই প্রতিবেদক বলেন, একটি কালো গ্লাসের মাইক্রোবাসে তাদের তুলে নেওয়া হয়েছে। এর জবাবে তিনি বলেন, কালো মাইক্রোবাস হলেই কি ডিবির গাড়ি হয়! এরপর বিষয়টি নিয়ে তার ঊর্ধ্বতন অফিসারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে লালবাগ ডিবির ডিসি মশিউর রহমান বলেন, মাসরুর ও তার বড় ভাই মুয়াজ যাত্রাবাড়ী এলাকায় ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছে, যার ভিডিও মাসরুর ধারণ করে। সে ও তার ভাই এ হত্যায় নির্দেশ দিয়েছে। তার বাবা-ভাইকে সেগুনবাগিচায় আটক করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা পুরো পরিবার জামায়াত-শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত। তার বাবা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, ডিবির হাতে আটক হওয়া হাসানের ভাই ও বাবা একটি লিখিত বক্তব্য নিয়ে এসেছিলেন। পরে সেটি সাংবাদিকদের তুলে দেওয়া হয়।

হাসানের বড় ভাই মেহেদী হাসানের লিখিত বক্তব্য বলা হয়েছে, ‘গত ২৫ জুলাই রোজ বৃহস্পতিবার ডেমরা বড়ভাঙ্গায় ফজর নামাজের পর নিকটাত্মীয়ের বাসায় বেড়ানোরত অবস্থায় বাসার নিচ থেকে অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি ডিবি পরিচয়ে কালো কাপড়ে চোখ বেধে নিয়ে যায় (প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীর সাক্ষ্য অনুযায়ী)। এরপর পুলিশের কিছু সদস্য আত্মীয়ের (মাসরুরের মামা) বাসায় অভিযান পরিচালনা করে এবং মাসরুরকে কেন তারা বাসায় আশ্রয় দিয়েছে শুধুমাত্র এই অভিযোগে ভুক্তভোগীর মামা, মামার দুই শিশু কিশোর সন্তান ও তার ভাতিজাকে ব্যাপক মারধর ও জিজ্ঞাসাবাদ করে ডেমরা থানায় আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে মাসরুরকে তারা পায়নি, যদি তাকে হাজির না করা হয় তাহলে নাকি আটককৃতদের লাশ বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’

আরও বলা হয়, ‘পরে ভুক্তভোগী মাসরুরের মামা, তার সন্তান এবং ভাতিজাকে সিএমএম আদালতে প্রেরণ করা হলে সাজানো মামলায় তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে ভিকটিম মাসরুরের কোন খোঁজ অত্র থানায় পাওয়া যায়না। আজ পাঁচদিন যাবৎ তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আশপাশের সকল থানায় যোগাযোগ করেও তার ব্যাপারে কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সে কোথায় কী অবস্থায় আছে পরিবারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। প্রশাসনের একটি অসমর্থিত সূত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তাকে সম্ভবত ডিবি অফিসে কিংবা রযাবের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে থাকতে পারে, যা আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি। এমতাবস্থায় আমরা তার জীবন নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত, আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে মাসরুর এর সন্ধান দাবী করছি। প্রশাসনের প্রতি বিনীত অনুরোধ, দয়া করে আমাদের মাসরুরকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। পাশাপাশি আটককৃত মাসরুর হাসানের মামা ও তার পরিবারের সদস্যদের জামিনে মুক্তি ও আরোপিত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]