প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও ট্রেডমার্ক ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস টেস্টিং ইন্সটিউশন (বিএসটিআই) এর লগো ব্যবহার করে মানহীন লাচ্চা সেমাই বাজারজাত করছে ‘ছক্কা ফুড প্রডাক্টাস’ নামের এক সেমাই কারখানা। কারখানাটি জয়পুরহাট জেলাধীন আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের চকরঘুনাথ গ্রামে অবস্থিত।
সেমাই কারখানাটির স্বত্তাধিকারী চকরঘুনাথ গ্রামের দেলোয়ার হোসেন। তিনি রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে গত বছরের ন্যায় এবছরেও একইভাবে বিএসটিআই-এর লগো ব্যবহার করে সেমাই বাজারজাত করছেন। এ বিষয়ে গত বছর বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশও হয়েছিল। সংবাদ প্রকাশের পর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরির জন্য জরিমানাও গুনেছিলেন তিনি। কিন্তুু বিএসটিআই-এর লগো ব্যবহারের বিষয়টি থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এতে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন লগো দেখে কেনা সাধারণ ক্রেতারা।
মঙ্গলবার বিকেলে সরজিনে গিয়ে দেখা যায়, সেমাই কারখানাটিতে কাজ করছে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক। সেমাই তৈরিতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মাক্স, হাতের গেøাবস বাবহার না করেই গরমের মধ্যে কাজ করছেন তারা। এতে অনায়াসেই শরীরের ঘাম মিশে যাচ্ছে এসকল সেমাইয়ের সাথে। কাজের তদারকি করছেন মালিকেরে ছেলে। দেখা যায় প্রতিটি সেমাইয়ের প্যকেটে ব্যবহার করা হচ্ছে বিএসটিআই এর লগো ও ট্রেড মার্ক। তবে তাদের অনুমোদনের কাগজ দেখতে চাইলে বলেন বাবা আসলে দেখাতে পারবে। পরবর্তীতে বুধবার আবার সেই কারখানায় গেলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। কালি ব্যবহার করে মিশিয়ে দেওয়া হয় বিএসটিআই এর লগো ও শ্রমিকরা ব্যবহার করছেন সুরক্ষা সামগ্রী। অনুমোদনের কাগজের পরিবর্তে দেখান আবেদনের কাগজ।
ছক্কা কোম্পানির এক সেমাই ক্রেতা মাসুদ বলেন ‘ আমি বিএসটিআই এর অনুমোদন দেখেই বাজার ৮৫ টাকায় এই সেমাই এক প্যকেট কিনেছি। যদি অনুমোদন না থাকে তাহলে লগো ব্যবহার করে আমাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে।’
বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে,‘ তারা বিএসটিআই এর অনুমোদিত দেখেই এই সেমাই ক্রয় ও বিক্রয় করছেন।’
প্রতিষ্ঠানটির মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিএসটিআই’র অনুমোদন নেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ লোগো ব্যবহারের মৌখিক অনুমতি দেওয়ায় প্যাকেটে লোগো ব্যবহার করছি। এখনো লাইসেন্স পাইনি। আপনারা গতকাল আসার পর বিএসটিআই অফিসে কথা বলি । তাদের পরামর্শেই যে লোগো প্যাকেটের গায়ে এবং সেমাইয়ের লেভেলে রয়েছে তা কালি দিয়ে সব মুছে দেওয়া হচ্ছে ’।
উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সামছুন নাহার মুঠোফোনে বলেন, ‘গত দুই দিন পূর্বে আমি কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। আমার পরামর্শেই বিএসটিআই’র অনুমোদনের জন্য নমুনা তারা কর্তৃপক্ষকে সেমাইয়ের নমুনা দিয়েছে। ফলে তারা লগো ও নাম ব্যবহার করছে’।
জয়পুরহাট ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তর সহকারী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, ‘অনুমোদন বা লাইসেন্স ছাড়া কেউ বিএসটিআই’র সীল বা লোগো ব্যবহার করতে পারবে না। এটি সম্পূর্ণ বে-আইনী এবং শাস্তিমূলক অপরাধ। উৎপাদিত পণ্যের খাদ্যের গুণগত মান প্যাকেটের গায়ে উল্লেখ থাকতে হবে। ছক্কা ফুড প্রোডাক্টসের বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে’।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম হাবিবুল হাসান বলেন, ‘এ ব্যপারে ম্যাজিষ্ট্রেট পাঠিয়ে তদন্ত করে অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে’।
রাজশাহীর সময়/এএইচ