উত্তরপত্রে বিশেষ চিহ্ন, নাম্বার বাড়াতেন পুলিশ সুপার


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 12-07-2024

উত্তরপত্রে বিশেষ চিহ্ন, নাম্বার বাড়াতেন পুলিশ সুপার

পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্রে চাকরিপ্রত্যাশীদের দেওয়া বিশেষ চিহ্ন দেখে ৩২ পরীক্ষার্থীকে বেশি নম্বর দিয়েছেন পরীক্ষক।  এছাড়া নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন আগেই সাজেশন আকারে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এভাবে সাত প্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

মাদারীপুরে ২০১৯ সালে কনস্টেবল পদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এ মামলায় মাদারীপুরের সাবেক পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিরা হলেন, সাবেক কনস্টেবল নুরুজ্জামান সুমন, সাবেক কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম, সাবেক টিএসআই গোলাম রহমান ও পুলিশ হাসপাতালের সাবেক মেডিকেল সহকারী পিয়াস বালা। আরেক আসামি মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি গ্রামের হায়দার ফরাজীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে দুদক।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম।

দুদকের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আকতারুজ্জামান মোবাইল ফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ নিয়োগে দুদকের করা মামলায় একাধিক ভুক্তভোগী, মামলার সাক্ষী ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আসামিরা বর্তমানে জামিনে। দোষ না থাকায় একজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছে দুদক।

দুদক মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৮ মে পুলিশে টিআরসি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সদর দপ্তর। পরে ওই বছরের ২৬ জুন ৩১ জন পুরুষ ও ২৩ জন নারীকে কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগেই ২০১৯ সালের ২৪ থেকে ২৬ জুন কয়েক ধাপে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আসামিদের কাছ থেকে গচ্ছিত অবস্থায় জব্দ করে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি বিশেষ দল। পরে অনুসন্ধানে পুলিশ সদর দপ্তর জানতে পারে, জব্দ করা টাকা বিভিন্ন চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের সুপারিশে ২০২৩ সালের ৫ জুলাই দুদকের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম। মামলায় তৎকালীন পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। পরে সাবেক পুলিশ সুপারসহ পাঁচজনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। তবে ঘটনায় জড়িত না থাকায় হায়দার ফরাজী নামের এক আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে সুপারিশ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাফিজুল ইসলাম।

অনুসন্ধানে চাকরিপ্রত্যাশী ৩২ পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই করে দুদক। এসব উত্তরপত্র থেকে দুদক জানতে পারে, উত্তরপত্রের প্রথম পৃষ্ঠার নিচে ডান কোনায় উদ্ধৃতি চিহ্ন, হাইফেনসহ বিভিন্ন প্রকার বিরামচিহ্ন দেওয়া রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের পাস করানোর জন্য এসব চিহ্ন দিতে বলে অভিযুক্ত চক্রটি। উত্তরপত্রে এসব চিহ্ন থাকা ৩২ পরীক্ষার্থীকে বেশি নম্বরও দিয়েছেন অভিযুক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার। সাবেক এই পুলিশ সুপারের হয়ে ঘুষের ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন তার বডিগার্ড নুরুজ্জামান সুমন, সাবেক কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম, সাবেক টিএসআই গোলাম রহমান, পুলিশ হাসপাতালের সাবেক মেডিকেল সহকারী পিয়াস বালা।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সার্কুলার বা শর্তাবলি লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]