এক পাতায় মিলবে ১৫ রোগের উপশম


ফারহানা জেরিন , আপডেট করা হয়েছে : 09-07-2024

এক পাতায় মিলবে ১৫ রোগের উপশম

থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই কমবেশি জানেন নিশ্চয়ই! তবে জানেন কি, খ্রিষ্টপূর্ব ১৭ শতক থেকে আফ্রিকা, জাভা, সুমাত্রা, ফ্রান্স, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে প্রাকৃতিক দাওয়াই হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে থানকুনি পাতা।

অ্যাকজিমা ও সোরিয়াসিসের মতো জটিল সব ত্বকের রোগসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে এই পাতায়। এতে থাকা একাধিক উপকারী খনিজ ও ভিটামিন মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।

প্রাচীন আর্য়ুবেদ শাস্ত্রে থানকুনি পাতার হাজারও গুণাগুণ সম্পর্কে উল্লেখ আছে। প্রতিদিন এই পাতার রস খেলে বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি পাবেন। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে-

১. পেটের বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচায় এই পাতা। এতে থাকা অ্যাসিয়াটিকোসাইড নামক উপাদান হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। এইসঙ্গে পেটের আলসার, ডায়রিয়া, বদহজমের সমস্যায় কাজ করে এই পাতা।

২. কোথাও কেটে গেলে থানকুনি পাতা থেঁতো করে লাগালেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি ঘা শুকিয়ে যায় দ্রুত। এই পাতায় থাকা স্যাপোনিনস নামক উপাদান ক্ষতস্থানের রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে ক্ষত শুকিয়ে যায় ও সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কাও কমে।

৩. থানকুনি পাতায় থাকে ব্যাকোসাইড এ ও বি। যা মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে ও রক্ত চলাচল বাড়ায়। থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। একইসঙ্গে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্যানটাসাইক্লিক ট্রিটারপেনস নামক উপাদান মস্তিষ্কের সেলের ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধি বাড়ে।

৪. বয়স্করা থানকুনি পাতার রস খেলে শেষ বয়সে অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতেও সাহায্য করে।

৫. অনেকের থ্রম্বোসিসের সমস্যা থাকে। হাত-পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা থেকে বাঁচতে নিয়মিত এই পাতার রস খেতে পারেন। থানকুনি পাতায় তাকা খনিজ উপাদান শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ফলে অনেক জটিল রোগ থেকে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।

৬. শরীরের অভ্যন্তরে কোনো ক্ষত হলে জ্বর, ক্লান্তি আসতেই পারে। এমনকি খিদে কমে যাওয়া, পেশির ব্যথা এগুলোও থাকে। থানকুনি পাতায় আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। যা দ্রুত শরীরের জ্বালা, যন্ত্রণা কমায়। এছাড়াও ক্লান্তি ভাব দূর হয়। একইসঙ্গে নানা ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকিও কমায়।

৭. আমাশয় সারাতেও খেতে পারে এই পাতা। বিশেষ করে ক্রনিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে খুবই ভালো থানকুনি পাতা।

৮. অনেকেই অনিদ্রায় ভোগেন। এ সমস্যার সমাধানে প্রতিদিন সকালে উঠে থানকুনি পাতা ভেজানো জল খান। এতে স্নায়ু শিথিল হবে ও ঘুম আসবেই।

৯. গাজর কিংবা পাতিলেবুর রস শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। থানকুনি পাতারও এই গুণ আছে। প্রতিদিন থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু, মিশিয়ে খান। যাবতীয় টক্সিন বেরিয়ে যাবে। শরীর থাকবে ফুরফুরে।

১০. অ্যাকজিমা, হাঁজলসহ নানা ধরনের চর্মরোগ সারিয়ে তোলে থানকুনি পাতা। এটি নিয়মিত খেলে ত্বকের জেল্লাও বাড়ে।

১১. অ্যাংজাইটি ও মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমায় এই পাতার গুণাগুণ। এমন সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। এতে থাকা কিছু উপাদান স্যারোটনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে কর্টিসল মানে স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমতে শুরু করে। ফলে অ্যাংজাইটি ও মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমে।

১২. মৃতকোষের ফলে চামড়ায় অনেক সময়ই শুষ্ক ছাল ওঠে। রুক্ষ হয়ে যায়। থানকুনি পাতার রস মৃতকোষগুলোকে পুনর্গঠন করে ত্বক মসৃণ করে দেয়।

১৩. শুধু ত্বকের সমস্যা নয় বরং চুলের জন্যও উপকারী এই পাতা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ২-৩ বার থানকুনি পাতার রস খেলে মাথার ত্বকের পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। ফলে চুল পড়ার মাত্রা কমতে শুরু করে।

১৪. কাশি কমাতে ২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। দ্রুত কাশি থেকে স্বস্তি মিলবে।

১৫. ঋতু পরিবর্তনের যারা জ্বরে ভোগেন তারা থানকুনি পাতা নিয়মিত খেতে পারেন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, জ্বরের সময় ১ চামচ থানকুনি পাতার রস ও ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অল্প সময়েই জ্বর সেরে যায়। একইসঙ্গে শারীরিক দুর্বলতাও কমে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]