হাদীরমোড় বৌ বাজারে দোকান ভাড়ার নামে আ’লীগ নেতার চাঁদাবাজী’র অভিযোগ


ইব্রাহিম হোসেন সম্রাট: , আপডেট করা হয়েছে : 06-07-2024

হাদীরমোড় বৌ বাজারে দোকান ভাড়ার নামে আ’লীগ নেতার চাঁদাবাজী’র অভিযোগ

রাজশাহী মহানগরীর হাদীরমোড় বৌ বাজারে দীর্ঘদিন থেকে চাঁদাবাজী করে আসছেন রাসিক (২৪ নং ওয়ার্ড) আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন, হাসিব, রেজাউলসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তির।

শনিবার (৬ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের প্রায় সকল মাছের দোকানিকে প্রতিদিন ৫০-১৫০টাকা, গরুর মাংস বিক্রেতাকে সপ্তাহে ১কেজি মাংস ও বিভিন্ন শাক-সবজি ব্যবসায়ীকে ২০-৫০টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়।

জনৈক মাছ বিক্রেতা বলেন, আমি প্রায় ১২ বছর যাবৎ মাছের ব্যবসা করে আসছি এই বাজারে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের খাজনা’র পাশাপাশি সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর ভাইকে প্রতিদিন ১০০টাকা চাঁদা দিতে হয়। 

খোলা আকাশের নিচে আর এই সরকারি পাকা রাস্তার ওপর ৫ফিট জায়গা নিয়ে দোকান বসালেও আলমগীর ভাই বলেন এইটা আমার জায়গা আমার বাড়ির পজিশন, দোকান বসালে ভাড়া দিতে হবে নয়তো অন্য জায়গায় দোকান নিয়ে যা। 

বাজারে দোকান না বসালেও তাকে চাঁদা দিতে হয়। আর আমাদের ব্যবসা প্রতিদিনই তো আর ভালো হয় না, একেক দিন খারাপ হলেও তিনি শুনতে চান না, ১০০টাকার কম দিতে চাইলে তিনি আমাদের ব্যবসা উঠিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়। 

সরকারি রাস্তা তিনি নিজের বলে দাবি করেন, আমরা নিরুপাই হয়ে তাকে চাঁদা দেই। একদিকে সিটি কর্পোরেশনের খাজনার টাকা আর আরেক দিকে দোকান ভাড়ার নামে ১০০টাকা করে প্রতিদিন তাকে চাঁদা দিতে হয়।

তিনি এক সময় কাউন্সিলর ছিলেন এবং বর্তমানে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের নেতা, ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। 

মাছ বিক্রেতা ভদু বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর যাবৎ মাছের ব্যবসা করে আসছি এই বাজারে। আমিও সাবেক কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে ব্যবসা করার দরুন তিনি আমার কাছে থেকে প্রতিদিন ৫০টাকা কারে চাঁদা নেন। সিটি কর্পোরেশনের খাজনা ৩০ টাকা আর আলমগীরভাইয়ের চাঁদা ৫০ টাকা সর্বোমোট ৮০টাকা আমাকে প্রতিদিন দিতে হয়। আমি প্রায় সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর সাহেবকে বলি আমরা তো সিটি কর্পোশনের জায়গায় বসে ব্যবসা করি, খাজনাও দিই। তাহলে আপনাকে আবার কিসের ভাড়া দিবো? তিনি বলেন, আমার বাড়ির ৩ ফিট জায়গা রাস্তায় ছাড়া আছে, সেই হিসাবে আমার জায়গায় তুই দোকান দিয়েছিস। যদি ভাড়া দিতে না পারিস তাহলে দোকান তুলে দেব বলে হুমকি দেয়। তিনি এক সময় রাসিক ২৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় আমরা ভয়ে থাকি। 

তিনি আরও বলেন, যদি রসিক মেয়র মহাদয় আমাদের এই চাঁদাবাজীর হাত থেকে মুক্তি দেয় তবে আমাদের জন্য সুবিধা হবে।

গরুর মাংস বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম কে এ ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গত ১০বছর যাবৎ এই বাজারে গরুর মাংস বিক্রয় করে আসছি। রেজাউল ভাইকে চাঁদার দরুণ প্রতি সপ্তাহে ১কেজি গরুর মাংস অথবা প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। কখনো ব্যবসা কম হলেও আমার কোন মাফ নেই। ১কেজি মাংস দেওয়াই লাগবে। নইলে আমার ব্যবসা তুলে দেওয়ার ও হুমকি দেন তিনি। 

তাদের এই চাঁদাবাজীর হাত থেকে মুক্ত করার জন্য রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন মহাদয়ের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

এই ব্যপারে সাবেক (২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর) ও ওয়ার্ড আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই হাদীরমোড় থেকে কেদুরমোড় পর্যন্ত যেই রাস্তাটা চলে গেছে সেখানে রাস্তার পাশের প্রত্যেক বাড়িকে ২-৩ ফিট জায়গা ছাড়তে হয়েছে। যেহুতু বাজার প্রত্যেকের বাড়ির সামনে বসে, তাই ভাড়া হিসাবে দোকানিদের কাছে সামান্য ২০-৩০টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। আর শুধু আমি না, এই বাজারে যাদের বাড়ি আছে তারা প্রত্যেকেই দোকান ভাড়া নিয়ে থাকেন। এতে দোষের কিছু দেখছি না।  রাস্তায় বসা দেকানীদের কাছে ভাড়া নেওয়া চাঁদা বাজির সমিল কি না? এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান।

এই ব্যপারে রামচন্দ্রপুর বউ বাজারের ইজারাদার মোঃ সজল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রামচন্দ্রপুর বউ বাজারে দীর্ঘদিন থেকেই চাঁদাবাজীর ঘটনাটি ঘটে আসছে। আমি গত ২বছর আগে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে টেন্ডারের মাধ্যেমে বৈধ উপায়ে রামচন্দ্রপুর বউ বাজারের ইজারাদার। এইবার দিয়ে ৩ বছর চলছে। আমি দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পর এই চাঁদাবাজি কিছুটা কমিয়ে আনতে পেরিছি, তবে বেশীর ভাগ চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারি নি। 

আমি রামচন্দ্রপুর বউ বাজারের ইজারাদার হিসাবে সোহাগ নামের এক যুবককে খাজনার টাকা তোলার জন্য রেখেছি, দোকান ও ব্যাক্তি বিবেচনায় আমারা ইজারার খাজনা ১০-৩০টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকি। যারা বাজারে সামান্য শাক-সবজি বিক্রয় করতে আসে তাদের কাছে থেকে খাজনার টাকা নিতে আমি নিষেধ করেছি। 

তবে এই বাজারে  (২৪ নং ওয়ার্ড) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর, হাসিব, রেজাউল-সহ বেশ কিছু কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা যারা ইজারার খাজনার টাকার থেকেও বেশী টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। মূলত তাদের বাড়ির সামনে কোন মাছ বা সবজির দোকান বসলেই তাদের কাছে থেকে দৈনিক বা মাসিক চুক্তিতে চাঁদা আদায় করেন তারা।

আমি অনেকবার এই চাঁদাবাজী থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু চাঁদাবাজী অব্যাহত রেখেছে তারা। এই বিষয়ে আমি সিটি কর্পোশনের প্রশাসন শাখা ও বাজার শাখাকে মোখিক ও লিখতভাবে চাঁদাবাজীর বিষয়টি জানিয়েছি। যদি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন থেকে কোন প্রকার ব্যবস্থা না গ্রহণ না করে। তাহলে এই চাঁদাবাজীর বিষয়টি শক্ত হতে দমন করতে বাধ্য হবে বলেও জানান ইজারাদার সজল।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]