ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে মিরসরাইয়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 03-07-2024

ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে মিরসরাইয়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি সহাস্রাধিক পরিবার। এছাড়া পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেঙেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক এবং পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে রোপা আমন ও সবজি খেত।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে খাল সংস্কার না থাকায় ও অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। বুধবার (৩ জুলাই) পানিবন্দি ৪৫০ পরিবারের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে বরে জানা যায়।

জানা গেছে, টানা ছয় দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, মিরসরাই সদর, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কের বিভিন্ন স্থানে। সড়কে গর্তের কারণে অনেকটা চলাচলের অনুপযোগী জনবহুল বড়দারোগাহাট-বগাচতর সড়ক, জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট সড়ক। পানিবন্দি হয়ে আছে ফেনাপুনি, ওসমানপুরের মরগাং, চিনকীআস্তানা ও খিলমুরালী গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার। চুলায় পানি ওঠায় রান্নাও বন্ধ।

খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাফুনী গ্রামে পানিবন্দি রয়েছে অনেক পরিবার। কোমর পানি হওয়ায় মানুষের চলাচলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের জানান, ফেনাফুনী খালটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টি হলে তো ভোগান্তির শেষ থাকে না। কোমর পরিমাণ পানির কারণে চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেকে রান্নাঘরের চুলায় পানি উঠায় রান্না-বান্না হয়নি।

আরেক বাসিন্দা শিহাব শিবুল জানান, পাহাড়ি তিন ছড়ার পানি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হয়ে এক ছড়া দিয়ে যায়। কিন্তু ছড়ার মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ করে দখলের কারণে পানি যাওয়ার পথ বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি বছর বৃষ্টি হলে আমাদের গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত থাকে। অচিরেই খালের ওপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খাল সংস্কার করার জোর দাবি জানান তিনি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাল পার্শ্ববর্তী হাট-বাজারগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ দোকান-পাট ও স্থাপনা। এগুলোর কারণে বিভিন্ন খালে পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে। ফলে প্রতি বছর নিম্নাঞ্চল এলাকা পানির নিচে ডুবে যায়। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশনের পথ না রেখে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে তোলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, তার ইউনিয়নের ফেনাফুনী ও সৈদালী গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (১ জুলাই) বিকালের দিকে তিনি এলাকগুলো পরিদর্শন করেছেন। তিনি আরো বলেন, মূলত মায়ানী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নের লোকজন খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে তার ইউনিয়নের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনি এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান তিনি।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন ও সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় মৎস্য প্রকল্পগুলোর পাড় নিচু হওয়ায় দুই দিন বৃষ্টি হলেই পানি বাইরে চলে যায়। টানা ৬ দিন বৃষ্টি হওয়ায় মৎস্যচাষিদের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চাষি তাকে ক্ষতির বিষয়ে অবহিত করেনি বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে ইউএনও মাহফুজা জেরিন বলেন, গত ৬ দিন টানা বৃষ্টিতে মিরসরাইয়ের অনেক এলাকায় পানি উঠে গেছে। বুধবার উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নে ২৫০ পরিবার ও ইছাখালী ইউনিয়নের ২০০ পানিবন্দি পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]