পুতঃপবিত্র জীবন ও সমাজ গঠনের জন্য বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে প্রাপ্ত বয়স্ক ও কর্মক্ষম পুরুষদের বিয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরেও কর্মক্ষম হয়নি এমন যুবকদের জন্য বিকল্প হিসেবে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে যাদের জীবনে প্রাচুর্য কম তারা আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে বিয়ে করলে আল্লাহ তায়ালা তাদের সচ্ছলতা দান করবেন বলেও সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিয়েতে সামর্থ্য নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে— যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেন। (সূরা নুর, আয়াত : ৩২-৩৩)
এক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমরা কয়েকজন যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছু ছিল না। আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। কেননা, সওম তার যৌনতাকে দমন করবে। (বুখারি, হাদিস, ৪৬৯৩)
ইসলামে বিয়ের বিধান বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। কোরআন ও একাধিক হাদিসে এনিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নারী-পুরুষের জন্য মাহরামকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এক স্বামীর সঙ্গে একসঙ্গে দুই বোনের বিয়ে বা সংসারকেও হারাম বলা হয়েছে।
অর্থাৎ, আপন দুই বোন একসঙ্গে এক স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে পারবে না। আপন দুই বোনকে একসঙ্গে বিয়ে করা হারাম। পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতে এ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এভাবে-
وَ اَنۡ تَجۡمَعُوۡا بَیۡنَ الۡاُخۡتَیۡنِ اِلَّا مَا قَدۡ سَلَفَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا
‘আর দুই বোনকে একত্র (বিয়ে) করা (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ২৩)
এই আয়াত নাজিলের আগে একসঙ্গে দুই বোনকে বিয়ের কিছু ঘটনা ঘটেছে তা আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু যদি কেউ এরূপ অবস্থায় ইসলামে গ্রহণ করে যে, সে একসঙ্গে দুই বোনকে বিয়ে করেছে তাহলে তাদের মধ্য থেকে দুজনের একজনকে তালাক দিতে হবে।
এ বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একটি হাদিসও বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
হজরত ফাইরোজ আদ-দাইলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললাম, আমি ঈমান এনেছি অথচ দুই বোন আমার স্ত্রী হিসেবে আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি তাদের যে কোনো একজনকে তালাক দিয়ে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘কোনো নারী এবং তার ফুফু। অনুরূপভাবে কোনো নারী এবং তার খালাকে একত্রে বিয়ে করা যাবে না।’ (বুখারি)
কোরআন-সুন্নাহর আলোকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, আপন দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করা যাবে না। তবে যদি কোনো বোন মারা যায় তবে তার আপন বোনকে বিয়ে করা যাবে। কিন্তু এক সঙ্গে দুই বোন এক স্বামীর সংসার করতে পারবে না। ইসলামে এটি হারাম।
তাবিয়ি ঈসা ইবন তালহা রহ, বলেন, কোনো মহিলাকে তার আত্মীয়ার সাথে একত্রে বিবাহ করতে রাসূলুল্লাহ সা. নিষেধ করেছেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয়ে তিনি এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। (ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার, হাদিস : ১৫৮১)