তানোরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচির টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র


আলিফ হোসেন, তানোর প্রতিনিধি: , আপডেট করা হয়েছে : 03-07-2024

তানোরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচির টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র

রাজশাহীর তানোরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচির উপকারভোগীদের মাসিক ভাতার টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। এনিয়ে উপকারভোগীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণীর অসাধু ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নেপথ্যে মদদে সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র বিস্তার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। কারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মদদ ব্যতিত উপকারভোগীর মোবাইল নম্বর অন্য কারো জানার কথা নয়।

জানা গেছে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচিতে  বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর  জনগোষ্ঠীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। অথচ তাদের মাসিক ভাতার টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে একটি  সংঘবদ্ধ  প্রতারকচক্র।

সংশ্লিষ্ট  সূত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচির বিভিন্ন ক্যাটাগরিত মোট  ৭ হাজার ৮৯২ জন ভাতা পাচ্ছেন। তার মধ্যে বয়স্ক ৩ হাজার ৮০৫ জন, বিধবা এক হাজার ৯০৫ জন, প্রতিবন্ধী ৪ হাজার ৬৫৪ জন এবং অনগ্রসর হিসেবে ৩১ জন ভাতা পাচ্ছেন। বয়স্করা প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ১ হাজার ৮০০ টাকা, বিধবারা ১হাজার ৬৫০ টাকা, প্রতিবন্ধীরা ২ হাজার ৫৫০ টাকা এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ১ হাজার ৬৫০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত উপকারভোগীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে  চক্রটি। বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়ত ভুক্তভোগীরা ভিড় করছেন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, এই ধরণের প্রতারণা রোধে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নাই। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ‘নগদ’ মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ভাতার টাকা দিচ্ছে সরকার। সেই টাকা বাড়িতে বসে মোবাইলে পাচ্ছেন  উপকারভোগীরা। অথচ এর আগে ভাতার টাকা তুলতে উপকারভোগীদের ব্যাংকে যেতে হতো। কিন্ত্ত ডিজিটালাইজেশন হবার পর একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র উপকারভোগীদের কাছ থেকে ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।  প্রথম দিকে তারা ফোন করে অ্যাকাউন্টের পিন নাম্বার চাইলেও এখন তারা ওটিপির মাধ্যমে নিমেষেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে।  ইতমধ্যে উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষ এই প্রতারণার শিকার হয়েছে।

ভুক্তভোগী উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি)  কৃষ্ণপুর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী বকুল বলেন, প্রতিবন্ধী হিসেবে প্রতিমাসে ৮৫০ টাকা করে ৩ মাস পরপর ২৫৫০ টাকা ভাতা পেতেন তিনি। এবার টাকা তুলতে গিয়ে শুনেন তার মোবাইল ব্যাংকিং এর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। একথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। অভাবের সংসারে ভাতার টাকায় দিয়ে তিনি ওষুধপত্র কিনতেন। এখন কিভাবে তিনি ওষুধ কিনবেন এ নিয়ে চিন্তার ভাজ তার কপালে। তিনি মোবাইল ব্যবহার করতে পারেন না আর তার পরিবারের কেউ প্রতারক চক্রকে ওটিপি দিয়েছেন কিনা তিনি তাও জানেন না। ইউপির  বাতাসপুর গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী মুনছুর আলী বলেন, কয়েকদিন আগে কেউ একজন ফোন দিয়ে নিজেকে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তার ভাতার টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হবে এ কথা জানান। এজন্য তার মোবাইলে একটি কোড যাবে যা তাকে দেওয়ার জন্য বলে। তিনি সরল মনে বিশ্বাস করে ওটিপি দেওয়ার পর তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চলে যায়। তিনি শুধু নন তার গ্রামের অন্তত ৭  জন এরকম প্রতারণার শিকার হয়েছে বলে জানান তিনি।

উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার বাসিন্দা রুবিনা বেগম বলেন, তিনি মোবাইলের কিছুই  বুঝেন না। কিছুদিন আগে ভাতার টাকা বাড়িয়ে দেবে বলে একটা ফোন আসে যা আমার মেয়ে রিসিভ করে। পরবর্তীতে ফোনে একটি কোড আসে যা ওদেরকে দেওয়ার পরে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে যায়। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জানাবেন বলে জানান।

তানোর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, গত কয়েকদিনে প্রতারকচক্র কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন এ রকম বেশ কয়েকজন মানুষ আমাদের অফিসে এসেছেন। আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে কেউ ভাতা ভোগীদের ফোন করে কখনো পিন কোড অথবা ওটিপি চাইবে না। প্রতারণার রোধে এ বিষয়ে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।

এবিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]