স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার নারী


অনলাইন ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 01-07-2024

স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার নারী

‘আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, সে সম্পর্ক শেষও হয়েছে। তাই বলে দলবল নিয়ে ধর্ষণ করবে, কল্পনাও করিনি। হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেও মাফ পাইনি।’ কথাগুলো বলছিলেন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এক নারী। ২৮ জুন রাতে রাজধানীর খিলক্ষেতের বনরূপা এলাকায় স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন তিনি।

সোমবার রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় ওই নারীর (৩৭) সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, সাবেক প্রেমিক ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে রড দিয়ে পেটান এবং গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করেন ।

এ ঘটনায় সাত আসামির সবাইকে গ্রেপ্তার করেছে খিলক্ষেত থানার পুলিশ। আসামিরা হলেন আবুল কাশেম ওরফে সুমন (৩৭), পার্থ বিশ্বাস (২০), নূর মোহাম্মদ (২০), হাসিবুল হাসান (১৯), রবিন হোসেন (২৮), মীর আজিজুল ইসলাম (২৩) ও মেহেদী হাসান (২২)।

মামলার বাদী ভুক্তভোগী নারী। তিনি জানান, সাত আসামির মধ্যে কাশেম ও কম বয়সী তিনটি ছেলে তাঁকে ধর্ষণ করে। আরও কয়েকজন তাঁদের সহায়তা করেন। থানা থেকে তাঁকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে মেডিকেল পরীক্ষা করিয়েছে পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল হক খন্দকার বলেন, আসামিদের গতকাল আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীর মেডিকেল পরীক্ষা করার পর রোববার বিকেলে স্বামীর হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী নারীর বাড়ি উত্তরাঞ্চলের একটি জেলায়। বাবা গত বছর মারা গেছেন। ২০১০ সালে কলেজে পড়ার সময় বিয়ে করেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস স্বামী সাভারে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। বিয়ের পর তিনিও পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। ২০১৫ সালে এক সন্তানের মা হন। সে সময় তিনি পোশাক কারখানার চাকরি ছেড়ে একটি বাহিনীতে নির্দিষ্ট মেয়াদে বেসরকারি সদস্য হিসেবে যোগ দেন। কর্মস্থল ছিল পার্বত্য অঞ্চলে। তাঁর সন্তান গ্রামে নানীর কাছে বড় হতে থাকে। আর স্বামী তাঁকে ছেড়ে আরেকটি বিয়ে করেন। ২০১৭ সালে ওই বাহিনীতে কাজের মেয়াদ শেষ হলে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান। দুই বছর পর ওই বাহিনীতে আবার ডাক পান। এবার কর্মস্থল হয় গাজীপুরে। ২০২১ সাল পর্যন্ত কাজ করার পর অল্প কিছুদিন আরেকটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তারপর আবার গ্রামে ফিরে যান। এই সময়ের মধ্যে ২০১৯ সালে পরিচয় হয় এই ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আবুল কাশেমের সঙ্গে।

কাশেমের সঙ্গে পরিচয় তাঁর জীবনের একটি বড় ভুল বলে মনে করেন ওই নারী। বলেন, সম্পর্কের একপর্যায়ে তিনি কাশেমকে বিয়ে করতে বললে রাজি হতেন না। কিন্তু নিজের পরিবারে তাঁকে স্ত্রী বলে পরিচয় দিতেন। তিনি কাশেমের সঙ্গে বেশ কয়েকবার তাঁর গ্রামের বাড়িতেও গেছেন। কাশেম মাদকাসক্ত হওয়ায় তাঁর সঙ্গে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে। নেশা করার জন্য টাকা চাইতেন। টাকা না পেলে নির্যাতন করতেন। শেষে তিনি কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

ভুক্তভোগী এই নারী গত ১৮ জুন আবার বিয়ে করেন। ঘটনার দিন ২৮ জুন তিনি কাওলায় সাবেক এক সহকর্মীর বোনের বাড়িতে স্বামীকে নিয়ে বেড়াতে যান। সেখান থেকে বিমানবন্দরে এক ব্যক্তির সঙ্গে একটি কাজে দেখা করে দুজন মিলে হেঁটে হেঁটে ঘুরতে থাকেন এলাকাটিতে।

ওই নারী বলেন, রাত সাড়ে নয়টার দিকে বনরূপা এলাকায় ঘোরার সময় কাশেমকে আরও তিনজন ছেলের সঙ্গে দেখতে পান। তিনি কাশেমকে এড়াতে স্বামীর সঙ্গে দ্রুত হাঁটতে থাকেন। কিন্তু ওই চারজন তাঁদের স্বামী-স্ত্রীকে টেনেহিঁচড়ে ঝোপের দিকে টেনে নিয়ে যান। রড দিয়ে তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে পেটাতে থাকেন এবং ধর্ষণ করেন আসামিরা। এ সময় টাকাও চান কাশেম।

ওই নারী বলেন, স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাবেন এবং টাকা দেবেন বলার পর কাশেম ভোর পাঁচটার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেন। তিনি ওই সময় হাঁটতে হাঁটতে খিলক্ষেতে একটি সেতুর কাছে এসে এক নিরাপত্তাকর্মীর মুঠোফোন থেকে স্বামীকে ফোন করেন। তখন স্বামী ও পুলিশ সদস্যরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। এ ঘটনায় কাশেম ও তাঁর সহযোগীরা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পান, তা নিশ্চিত করার দাবি জানান ভুক্তভোগী ওই নারী। সূত্র: প্রথম আলো


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]