নওগাঁয় এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে ভুল অপারেশনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রতিকার চেয়ে সিভিল সার্জনের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে শহরের প্রাইম ল্যাব এন্ড হসপিটালে। নওগাঁ সদর হাসপাতালের কিডনি ও ইউরোলজি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা: গোলাম সাকলাইনের বিরুদ্ধে অপারেশনে ব্যর্থতা ও ভুল অপারেশনের অভিযোগটি পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, নওগাঁ সদরের পার নওগাঁ সরদারপাড়া গ্রমের মৃত মুনছুর আলীর ছেলে রিক্সা চালক আব্দুল মালেক প্রসাবের জ্বালাপোড়া ব্যাথার সমস্যা নিয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালে যান ডা: গোলাম সাকলাইনের কাছে। সকল পরিক্ষা নিররিক্ষা শেষে ডা: সাকলাইন বলেন প্রসাবের থলিতে পাথর জমেছে তা দ্রুত অপারেশন করতে হবে। শহরের প্রাইম ল্যাব এন্ড হসপিটালে তিনি সল্প খরচে অপারেশন করে দিবেন বলে পরামর্শ দেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশনের জন্য গত ৭মে ঐ হাসপাতালে ভর্তি হন ভুক্তভোগী মালেক। ভর্তির পর ১৫হাজার টাকা চুক্তিতে অপারেশন করেন ডা: গোলাম সাকলাইন। কিন্তু অপারেশনে ব্যর্থ হন তিনি। মুত্রথলি থেকে কোন পাথর বের করতে পারেননি তিনি। অবস্থা বেগতি দেখে বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা: মুক্তার হোসেনের সহায়তা চাইলে ঘটনাস্থলে (অপারেশন থিয়েটরে) আসেন ডা: মুক্তার । তিনি রোগীর অবস্থা দেখে জানান, এটি মেশিনের সাহায্যে অপারেশন প্রয়োজন খালি হাতে পাথর বের করা সম্ভব না। এর পর অপারেশনে ব্যর্থ হয়ে সেলাই দেন ডা: সাকলাইন, কিন্তু ভিতরে একটি পাইপ রেখে দেন। অপারেশনের ৪দিন পর রোগীকে ছাড় পত্র দিলে রোগী বাড়িতে চলে আসে এরপর শুরু হয় ক্ষত স্থানে প্রচন্ড ব্যাথা ও রক্ত ঝরা।
অবস্থা বেগতি দেখে কয়েকদিন পর রোগীকে নিয়ে রাজশাহী জেনেরেল হানপাতালে ভর্তি করালে সেখানে পুন:রায় মেশিনের সাহায্যে অপারেশন করে মূত্র থলি হতে পাথর বের করা হয়। এতে করে অর্থিকভাবে ভুক্তভোগী ঐ রোগীর আরো প্রায় ৫০হাজার টাকা খরচ হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রিক্সা চালক মালেক তার মাসহ ও ২জন আত্মীয়কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান অর্থিক ক্ষতির বিষয়ে কথা বলতে কথা বলার এক পর্যায়ে ডা: গোলাম সাকলাইন ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীকে মারধর ও ঘাড় ধাক্কা দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এরপর ভুক্তভোগী আব্দুল মালেক ২৫ এপ্রিল বিকেলে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সিভিল সার্জন বরাবার একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার সুষ্ট তদন্ত, অপারেশনে ব্যর্থতা ও আর্থিক ক্ষতি পুরনের দাবী জানান ভুক্তভোগী রিক্সা চালক আব্দুল মালেক।
ভুক্তোভোগী রিক্সা চালক আব্দুল মালেক বলেন, ডা: গোলাম সাকলাইনের আমার মূত্রথলিতে অপারেশন করার পর থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। আর প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূব করি। ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর আবার ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি স্বীকার করেন মূত্রথলি থেকে পাথর বের করা সম্বব হয়নি। এ ছাড়া ভিতরে একটি পাইপ রেখে দেয়। আমার মাসহ ও ২জন আত্মীয়কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে অর্থিক ক্ষতির বিষয়ে কথা বলতে কথা বলার এক পর্যায়ে ডা: গোলাম সাকলাইন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ও আমার মাকে মারধোর ও ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের হুমকি দেয়। আমার ব্যাথা ও রক্ত পড়া বন্ধ না হলে রাজশাহী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে পূণরায় অপারেশন করে একটি বড় পাথর ও পাইপ বের করেন সেখানকার চিকিৎসক। বর্তমান দুই বার অপারেশ করার ফলে আমার শারীরিক ও আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। নওগাঁ সিভিল সার্জন এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
ভুক্তভোগির মা মালেকা বেগম বলেন, আমার ছেলের মূত্রথলির অপারেশন করে পাথর বের না করেই সেলাই করে ডাক্তার গোলাম সাকলাইন। পরে তার কাছে গেলে ভুল অপারেশ এর কথা স্বীকার বলে, আবার মেশিন দিয়ে অপারেশন করে পাথর বের করে দিবো। কিন্তু দিনের পর দিন আমার ছেলের রক্ত পড়া ও ব্যাথা বেড়ে যায়। তার কাছে সর্বশেষ যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন ডাক্তার ক্ষিপ্ত হয়ে বলে তোদের মেরে নওগাঁ ছেড়ে চলে যাবো বলে আমাদের বেড় করে দেয়। তার পর রাজশাহীর একটি হাসপাতালে আবার অপারেশন করাই আমার ছেলেকে।
তিনি আরও বলেন, একজন ডাক্তার যদি রোগির ভুল অপারেশন করে তাহলে কিভাবে আমরা ডাত্তারদের বিশ্বাস করবো। আবার সুরাহার জন্য গেলে মেরে ফেলার হুমকি-ধামকি দেয়। এমন অবস্থায় আমরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। আমরা এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।
সংবাদকর্মী পরিচয়ে ডা: গোলাম সাকলাইনের চেম্বারে গিয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন,“হু আর ইউ” কে আপনি, আমি আপনার কাছে কেন মন্তব্য করবো। এরপর অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-অপারেশনটা ক্রিটিক্যাল ছিল তাই আমি করতে পারিনি, এটা আমার ব্যর্থতা। এটা মেশিন ছাড়া হবেনা তাদেরকে বলেছিলাম ১৫দিন পর মেশিনের সাহায্যে করে দিবো কিন্তু তারা রাজশাহীতে চলে যান।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- আমি আগে রোগী বা লোকজনের সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি। তারা এসে আগে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। তখন আমি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি। এর বেশি কিছু বলতে চাইনা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা: মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। রোগীর মুখ থেকে পুরো ঘটনাটি জেনেছি। ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আর রোগী বা সংবাদকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ এটা নি:সন্দেহে খারাপ কাজ, এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করবো।