র‍্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলতে সময় লাগবে: মোমেন


আন্তর্জাতিক ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 05-04-2022

র‍্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলতে সময় লাগবে: মোমেন

র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

তিনি বলেন, 'এটা ওদের প্রসেস আছে। এটা আমাদের কমপ্লিট করতে হবে। এই দেশে প্রায় জিনিসেরই দেয়ার আর মেনি প্রসেসেস… ওই কমিটির ওই লোকগুলোকে সন্তুষ্ট করতে হবে… এটাতে সময় লাগবে। সুইচের মত না যে একদিনে অন আর অফ করতে পারবে।'

বাংলাদেশে অনেক কিছু সহজে করা গেলেও যুক্তরাষ্ট্রে সেভাবে করা যায় না মন্তব্য করে মোমেন বলেন, 'আমাদের দেশের সরকার ইয়েস বললে ইয়েস হয়ে গেল। এখানে অনেক সময় চাইলেও পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে বাংলাদেশের তরফ থেকে তোলা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ।

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর গত বছর ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়।

বঙ্গবন্ধু’র খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরতের সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে রাজি হয়েছিল, কিন্তু পরে সেটি বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সোমবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিনকেনের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক শেষে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, আগে একবার ঠিক হয়েছিল তাকে পাঠানো হবে কিন্তু পাঠানো হয়নি। এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত শেষ করা উচিত।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো একটি গেম চেঞ্জার হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনকে জানিয়েছেন, একজন খুনিকে আশ্রয় দেওয়াকে আমেরিকান জনগণ পছন্দ করবে না। এটি আপনারা চিন্তা করতে পারেন।

উল্লেখ্য, রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করা হলেও এ পর্যন্ত তারা ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। দুই মন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বিমান চলাচল, রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানির বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে উক্ত বৈঠকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানির  ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে প্রায় ১৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এটি প্রত্যাহার করা হলে মার্কিন জনগণ উপকৃত হবে, যার প্রভাব তাদের নির্বাচনের ওপর পড়বে।

ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মূলত তৈরি পোশাক ক্রয় করে এবং বেশি দামে বিক্রি করে। আপনি (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) যদি শুল্ক প্রত্যাহার করেন, তাহলে আপনার ক্রেতারা উপকৃত হবে এবং আপনাদের ধন্যবাদ দেবে। আপনারা নির্বাচনে জিতে যাবেন।’

বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগের ৯০ শতাংশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আপনারা ওষুধ তৈরি করেন। ইনফরমেশন টেকনোলজি খাতে বাংলাদেশের তরুণরা ভালো করছে এবং সেখানে বিনিয়োগ করেন।’

‘প্রায় ১৭ কোটি লোকের বাজার হচ্ছে বাংলাদেশ। এই অঞ্চলে প্রায় ৪০০ কোটি লোকের বাস। এখানে মার্কিন বিনিয়োগ আসলে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হবে’, বলে তিনি জানান।

মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেটি আপনারা গ্রহণ করেন, আপনারা জিতবেন। আপনি যদি জিনিস তৈরি করেন, বিক্রি করেন— তাহলে আপনার লাভ হবে। আপনারা কমপিটিটিভ হবেন। আপনাদের তাগিদে আপনারা এখানে আসেন।’

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন।

বৈঠকের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দুদেশে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য, অর্থনীতিসহ বহু ক্ষেত্রে আমাদের কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, 'আগামী ৫০ বছর ও তারপরে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চাই আমরা। আমাদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, শান্তিরক্ষা মিশন, মানবাধিকার প্রভৃতি ইস্যুতে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।'

ব্লিংকেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্বে নেতৃত্বদাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

 রাজশাহীর সময়/এএইচ


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]