হাওরে পাহাড়ি ঢল, মাটির বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষা


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 04-04-2022

হাওরে পাহাড়ি ঢল, মাটির বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষা

বোরোপ্রধান সুনামগঞ্জে খুব কম জমির ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ঢলে পাহাড়ি যাদুকাটা, রক্তি ও বৌলাই নদীর পানির অস্বাভাবিক চাপে পড়েছে হাওর রক্ষা বাঁধগুলো। বিশেষ করে তাহিরপুর, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার কৃষকদের মধ্যে ‘সামাল সামাল’ রব উঠেছে। বিপদ সামলাতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোতে মাটির বস্তা ফেলা হচ্ছে।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানান, ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত কর্মকর্তারা মাঠে নজরদারিতে থাকবেন। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন রবিবার বিভিন্ন এলাকার বাঁধ পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বাঁধ রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, আগামী ৯ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলায় উৎসবের সঙ্গে বোরো ধান কাটার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আবু সাঈদ জানান, সোমবার থেকে পরবর্তী পাঁচ দিন বৃষ্টি কম থাকবে। তবে আবার বৃষ্টি হতে পারে। এতে হাওরবাসীর দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাত জেগে এলাকার বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। এলাকায় চলছে হাওররক্ষা বাঁধ টিকিয়ে রাখার ‘যুদ্ধ’। শনিবার রাতে হঠাৎ করে বিশাল মাঠিয়ান হাওরের বাঁধে ফাটল দেখা দিলে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে বাঁধের দিকে ছুটে যান। অবশেষে উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসীর চেষ্টায় বাঁধটি রক্ষা পায়। তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্দু বাবুল গতকাল সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে জানান, তিনি গভীর রাতে খবর পেয়ে  সুনামগঞ্জ থেকে ৫০০ প্লাস্টিক ব্যাগ নিয়ে সেখানে ছুটে যান। পরে ব্যাগে মাটি ভর্তি করে ফাটল ঠেকানো হয়।

অন্যদিকে ধর্মপাশার ‘সোনার থাল’ হাওর বাঁধের গোড়া থেকে মাটি সরে গেলে বাঁধ রক্ষায় মাটির বস্তা ফেলতে দেখা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম জানান, যেসব বাঁধের কাছে নদী-খাল রয়েছে, সেখানে নিচ দিকে পানি চুইয়ে মাটি দুর্বল হয়ে যায়। এতে বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে।

হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা জানালেন, সব হাওরের ধান তুলতে আরো এক মাস লাগবে। এই সময় পর্যন্ত আমাদের টিকে থাকতে হবে। এদিকে খরচার হাওরপাড়ের রাধানগরের কৃষক আব্দুল কাহিল বলেন, উপজেলার বড় হাওর খরচা ও আঙ্গারুলির ফসল রক্ষা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায়। শনির হাওরের বেড়িবাঁধের বাইরে গোপীনাথের নোয়াগাঁও ও নিশ্চিন্তপুরের চরের জমি ডুবে গেছে। লতিবপুরের চরের জমি বৌলাই নদীর পানিতে ছুঁইছুঁই। গুরমার হাওরের বর্ধিতাংশের ফসল ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বললেন, এপ্রিলের দুই তারিখের এত পানি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা গেল চার বছরে দেখেননি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, ‘নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত দেখে আমরাও দুশ্চিন্তায়।’

জানা গেছে, এবার সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ২২০ মেট্রিকটন ধান উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া হাওর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭২৭টি পিসিআই (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন করা হয়। জেলার বৃহৎ ৩৬টি হাওরের জন্য ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৬৬ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।

এদিকে শাল্লার দাড়াইন নদীর তীরের দুটি ভাঙন এলাকা ভরাট করায় অন্তত ৪ হাজার কৃষক দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছেন। এতে ছায়ার হাওর, জুড়িয়া হাওর ও পুটিয়া বন্দের হাওরের ৯০০ একর জমির ফসল রক্ষা পাবে। 

রাজশাহীর সময়/এএইচ


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]