ঠাকুরগাঁওয়ে অবহেলা ও অযত্নে পড়ে থাকা দেশের অন্যতম বিমানবন্দর পুনরায় চালু ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন পালন করা হয়েছে।
বুধবার (১২ জুন) শহরের চৌরাস্থায় ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন পালিত হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের সকল শ্রেণি পেশার মানুষজনের আয়োজনে মানববন্ধন চলাকালে ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক সত্য প্রসাদ ঘোষের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, সদর উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. অরুনাংশু দত্ত টিটো, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব সভাপতি মনসুর আলী, জেলা আ’লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রিপন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, বিশিষ্ট সমাজসেবক মো: মামুন উর রশিদ, সাংবাদিক তানভির হাসান তানু, কামরুল হাসান প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর পুন: চালু ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবিতে গঠিত কমিটির অন্যতম সংগঠক মোমিনুল ইসলাম বিশাল। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মানববন্ধনে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যসহ জেলার সর্বস্তরের মানুষজন অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু করা উত্তরের শেষ জনপদের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি। প্রেক্ষিতে এখন বিমানবন্দরটি চালু করা জরুরি হয়ে পরেছে। আর এ বন্দরটি চালু হলে
ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মানুষজন বাংলাবান্ধা সীমান্ত হয়ে ভারতের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক ভ্রমণের পাশাপাশি কেনাকাটা ও চিকিৎসা সেবার জন্য যেতে বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। যা দেশের মানুষের জন্য সুখকর নয়। এর অন্যতম কারণ হতে পারে সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই ২ জেলা থেকে রাজধানীর দুরত্ব ৪শ থেকে ৫শ কিলোমিটার। দীর্ঘ যাত্রায় রেল বা সড়ক পথে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা। আকাশ পথেও সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় এলাকাভেদে দূরত্ব ৭০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার। তাই এই দুই জেলার মানুষের প্রত্যাশা অবিলম্বে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু করা হোক। চালু হলে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ খুব সহজে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে।
বক্তারা আরও বলেন, এছাড়াও শীতের সময়সহ সারা বছরে এ জেলাগুলোতে রোগের প্রকৌপ অনেকি বেশি দেখা দেয়। এরপর আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যপক ভুমিকা পালন করবে। সেই সাথে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বেশকয়েকটি দেশ ব্যবসা বাণিজ্যে ভুমিকা রাখবে। তৈরি হবে কর্মসংস্থান। উত্তরের এ জেলায় বিমান বন্দরটি চালু হয়ে আশপাশের কয়েকটি জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সুফল পাবে। অপরদিকে বক্তারা আরও বলেন, এছাড়াও শীতের সময় এ জেলাগুলোতে রোগের প্রকৌপ অনেকি বেশি দেখা দেয়। উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে এই অঞ্চলের মানুষের যেতে হয় দিনাজপুর বা রংপুরে মেডিকেল কলেজে। এ দুই জেলার হাসপাতালগুলো থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় রোগী স্থানান্তরিত করার ফলে পথিমধ্যে অনেক রোগীর মৃত্যু ঘটে। এ কারণে এ জেলায় একটি মেডিকেল কলেজ অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করেন জেলাবাসী। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৬-৭শ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। গড়ে ভর্তি থাকছে প্রায় চারশ রোগী। তাই একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হিমসিম খাচ্ছে। তাই তারা মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত: বিমানবন্দরটি ১৯৪০ সালে ৫৫০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী এখানে হামলা চালালে বিমানবন্দরের রানওয়েটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বিমান বন্দরটি ১৯৭৭ সালে সংস্কার করা হয়, ও কয়েক বছর এখানে কিছু বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়। আগ্রহের অভাব এবং তখকার সময়ে যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে বিমানবন্দরের কার্যক্রম থেমে যায় এবং ১৯৮০ সালে এটি পরিত্যক্ত হয়।