সূরা মুরসালাত পবিত্র কোরআনের ৭৭ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫০। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ ও পবিত্র কোরআনের ২৯ তম পারায় অবস্থিত।
সূরা মুরসালাত
وَالۡمُرۡسَلٰتِ عُرۡفًا ۙ ١ فَالۡعٰصِفٰتِ عَصۡفًا ۙ ٢ وَّالنّٰشِرٰتِ نَشۡرًا ۙ ٣ فَالۡفٰرِقٰتِ فَرۡقًا ۙ ٤ فَالۡمُلۡقِیٰتِ ذِکۡرًا ۙ ٥ عُذۡرًا اَوۡ نُذۡرًا ۙ ٦ اِنَّمَا تُوۡعَدُوۡنَ لَوَاقِعٌ ؕ ٧ فَاِذَا النُّجُوۡمُ طُمِسَتۡ ۙ ٨ وَاِذَا السَّمَآءُ فُرِجَتۡ ۙ ٩ وَاِذَا الۡجِبَالُ نُسِفَتۡ ۙ ١۰ وَاِذَا الرُّسُلُ اُقِّتَتۡ ؕ ١١ لِاَیِّ یَوۡمٍ اُجِّلَتۡ ؕ ١٢ لِیَوۡمِ الۡفَصۡلِ ۚ ١٣ وَمَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا یَوۡمُ الۡفَصۡلِ ؕ ١٤ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ١٥ اَلَمۡ نُہۡلِکِ الۡاَوَّلِیۡنَ ؕ ١٦ ثُمَّ نُتۡبِعُہُمُ الۡاٰخِرِیۡنَ ١٧ کَذٰلِکَ نَفۡعَلُ بِالۡمُجۡرِمِیۡنَ ١٨ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ١٩ اَلَمۡ نَخۡلُقۡکُّمۡ مِّنۡ مَّآءٍ مَّہِیۡنٍ ۙ ٢۰ فَجَعَلۡنٰہُ فِیۡ قَرَارٍ مَّکِیۡنٍ ۙ ٢١ اِلٰی قَدَرٍ مَّعۡلُوۡمٍ ۙ ٢٢ فَقَدَرۡنَا ٭ۖ فَنِعۡمَ الۡقٰدِرُوۡنَ ٢٣ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٢٤ اَلَمۡ نَجۡعَلِ الۡاَرۡضَ کِفَاتًا ۙ ٢٥ اَحۡیَآءً وَّاَمۡوَاتًا ۙ ٢٦ وَّجَعَلۡنَا فِیۡہَا رَوَاسِیَ شٰمِخٰتٍ وَّاَسۡقَیۡنٰکُمۡ مَّآءً فُرَاتًا ؕ ٢٧ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٢٨ اِنۡطَلِقُوۡۤا اِلٰی مَا کُنۡتُمۡ بِہٖ تُکَذِّبُوۡنَ ۚ ٢٩ اِنۡطَلِقُوۡۤا اِلٰی ظِلٍّ ذِیۡ ثَلٰثِ شُعَبٍ ۙ ٣۰ لَّا ظَلِیۡلٍ وَّلَا یُغۡنِیۡ مِنَ اللَّہَبِ ؕ ٣١ اِنَّہَا تَرۡمِیۡ بِشَرَرٍ کَالۡقَصۡرِ ۚ ٣٢ کَاَنَّہٗ جِمٰلَتٌ صُفۡرٌ ؕ ٣٣ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٣٤ ہٰذَا یَوۡمُ لَا یَنۡطِقُوۡنَ ۙ ٣٥ وَلَا یُؤۡذَنُ لَہُمۡ فَیَعۡتَذِرُوۡنَ ٣٦ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٣٧ ہٰذَا یَوۡمُ الۡفَصۡلِ ۚ جَمَعۡنٰکُمۡ وَالۡاَوَّلِیۡنَ ٣٨ فَاِنۡ کَانَ لَکُمۡ کَیۡدٌ فَکِیۡدُوۡنِ ٣٩ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٪ ٤۰ اِنَّ الۡمُتَّقِیۡنَ فِیۡ ظِلٰلٍ وَّعُیُوۡنٍ ۙ ٤١ وَّفَوَاکِہَ مِمَّا یَشۡتَہُوۡنَ ؕ ٤٢ کُلُوۡا وَاشۡرَبُوۡا ہَنِیۡٓــًٔۢا بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ٤٣ اِنَّا کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ ٤٤ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٤٥ کُلُوۡا وَتَمَتَّعُوۡا قَلِیۡلًا اِنَّکُمۡ مُّجۡرِمُوۡنَ ٤٦ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٤٧ وَاِذَا قِیۡلَ لَہُمُ ارۡکَعُوۡا لَا یَرۡکَعُوۡنَ ٤٨ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٤٩ فَبِاَیِّ حَدِیۡثٍۭ بَعۡدَہٗ یُؤۡمِنُوۡنَ ٪ ٥۰
সূরা মুরসালাত অনুবাদ
শপথ একের পর এক প্রেরিত বায়ুর। তারপর প্রচণ্ড বেগে ছুটে চলা ঝড়ো হাওয়ার। এবং শপথ (মেঘমালাকে) ইতস্তত বিক্ষিপ্তকারী বায়ুর। অতঃপর শপথ তাদের (অর্থাৎ সেই ফেরেশতাদের), যারা সত্য ও মিথ্যাকে পৃথক করে দেয়। তারপর অবতীর্ণ করে উপদেশবাণী। যা মানুষের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার কারণ হয় অথবা হয় সতর্ককারী।
যে সম্পর্কে তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে তা অবশ্যই ঘটবে। সুতরাং (তা ঘটবে সেই সময়) যখন নক্ষত্ররাজি নিভিয়ে দেওয়া হবে। এবং যখন আকাশ বিদারণ করা হবে। এবং যখন পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলা হবে। এবং যখন রাসূলগণকে নির্দিষ্ট সময়ে একত্র করা হবে। (কেউ যদি জিজ্ঞেস করে) এসব মূলতবি রাখা হয়েছে কোন দিনের জন্য? (তার জবাব হল) বিচার দিবসের জন্য!
তুমি কি জান বিচার দিবস কী? সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। আমি কি পূর্ববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করিনি? অতঃপর পরবর্তীদেরকেও আমি তাদের অনুগামী করে দেব। আমি অপরাধীদের সাথে এ রকম আচরণই করে থাকি। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করিনি এক হীন পানি দ্বারা? অতঃপর আমি তা এক সুরক্ষিত অবস্থানস্থলে রাখি। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তারপর আমি তাতে পরিমিত রূপ দান করি। সুতরাং আমি কতই না উত্তম রূপদাতা!
সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। আমি কি ভূমিকে বানাইনি ধারণকারী, জীবিতদের এবং মৃতদেরও? এবং আমি তাতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় উঁচু-উঁচু পাহাড় এবং আমি তোমাদেরকে সুমিষ্ট পানি দ্বারা সিঞ্চিত করার ব্যবস্থা করেছি।
সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা যা অবিশ্বাস করতে, চলো এখন সেই জিনিসের দিকে। চলো তিন শাখাবিশিষ্ট শামিয়ানার দিকে। যাতে নেই (শীতল) ছায়া এবং যা আগুনের শিখা থেকে রক্ষা করতে পারবে না। তা অট্টালিকা তুল্য বড়-বড় স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করবে। মনে হবে তা হলুদ বর্ণের উট। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
তা এমন এক দিন, যে দিন লোকে কথা বলতে পারবে না। এবং তাদেরকে কোন অজুহাত প্রদর্শনেরও অনুমতি দেওয়া হবে না। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। এটা ফায়সালার দিন।
আমি একত্র করেছি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে। এখন তোমাদের যদি কোন কৌশল থাকে, তবে সে কৌশল আমার বিরুদ্ধে চালাও। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে তারা অবশ্যই ছায়া ও প্রস্রবণের মধ্যে থাকবে। এবং তাদের চাহিদামত ফলমূলের মধ্যে। (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে খাও ও পান কর তোমরা যা-কিছু করতে তার বিনিময়ে। আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করি। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
(হে কাফেরগণ!) অল্প কিছু কাল খাও ও মজা লোট। নিশ্চয়ই তোমরা অপরাধী। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহর সামনে নত হও, তারা নত হয় না। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। সুতরাং এরপর আর এমন কী কথা আছে, যার উপর তারা ঈমান আনবে?
এই সূরাতে কিয়ামত ও আখেরাতকে প্রমাণ, সত্যকে অস্বীকারকারীর পরিণতি, বিশ্বাসীদের পুরস্কার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
মুহাম্মাদ সা. কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার যে খবর দিয়েছেন তা যে অবশ্যই হবে প্রথম সাতটি আয়াতে তার সত্যতা ও বাস্তবতার সপক্ষে দলিল উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রমাণ পেশ করা হয়েছে যে, যে অসীম ক্ষমতাশালী সত্তা পৃথিবীতে এ বিস্ময়কর ব্যবস্থাপনা কায়েম করেছেন তাঁর শক্তি কিয়ামত সংঘটিত করতে অক্ষম হতে পারে না। আর যে স্পষ্ট যুক্তি ও কৌশল এ ব্যবস্থাপনার পেছনে কাজ করছে তাও প্রমাণ করে যে, আখেরাত অবশ্যই সংঘটিত হওয়া উচিত।
এরপর বলা হয়েছে, কিয়ামত দিবস নিয়ে ঠাট্টা করা বা অস্বীকারের কিছু নেই। এই দিন মানবজাতির ব্যাপারে চূড়ান্ত ফায়সালার দিন। আল্লাহ তায়ালা এর জন্য একটা বিশেষ সময় ঠিক করে রেখেছেন। ঠিক সে সময়ই তা সংঘটিত হবে।
আর যখন তা সংঘটিত হবে তখন সে এমন ভয়ানক রূপ নিয়ে আসবে যে, আজ যারা ঠাট্টা-বিদ্রূপের করছে তারা সে সময় দিশেহারা ও অস্থির হয়ে পড়বে। তখন তারা নিজেরাই জানতে পারবে যে, কিভাবে তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের আয়োজন করেছে।
এরপর মানুষের নিজের ইতিহাস, তার জন্ম এবং যে পৃথিবীতে সে জীবনযাপন করছে তার গঠন, আকৃতি ও বিন্যাস উপস্থাপন করে বলা হয়েছে, কিয়ামতের আসা এবং আখেরাত অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব এবং আল্লাহ তায়ালার প্রাজ্ঞতা ও বিচক্ষণতার দাবিও বটে।
মানুষের ইতিহাস বলছে, যেসব জাতিই আখেরাত অস্বীকার করেছে পরিণামে তারা বিপথগামী হয়েছে এবং ধ্বংস হয়ে গেছে।
এরপর আখেরাত অস্বীকারকারীদের পরিণাম বর্ণনা করা হয়েছে।
সবশেষে যারা আখেরাতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর বন্দেগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে যত আমোদ-ফূর্তি করতে চাও, করে নাও। শেষ অবধি তোমাদের পরিণাম হবে অত্যন্ত ধ্বংসকর।
বক্তব্যের সমাপ্তি টানা হয়েছে এই বলে যে, এ কোরআনের মাধ্যমেও যে ব্যক্তি হিদায়াত লাভ করতে পারে না তাকে দুনিয়ার কোনো জিনিসই হিদায়াত দান করতে সক্ষম নয়।