ব্রাজিলের মাতো গ্রোসো দো সোল প্রদেশের প্যান্টানাল অঞ্চলকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলাভূমি। জাগুয়ার, দৈত্যকার পিপড়াখাদক প্রাণী অ্যান্টেটার এবং নদীতে বসবাস করা বিশাল আকারের উদবিড়ালের আবাসভূমি এই অঞ্চলটি। সোমবার বিবিসি জানিয়েছে, সেই অঞ্চলটিতেই এখন দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দাবানলের কারণে ইতিমধ্যেই মাতো গ্রোসো দো সুল প্রদেশের প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমি ধ্বংস হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় ভয় হলো- এবারের দাবানল মৌসুমের আগেই শুরু হয়ে গেছে এবং আগের বছরগুলোর তুলনায় এবারের দাবানল আরও তীব্রভাবে দেখা দিচ্ছে।
অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা জানিয়েছেন, প্রবল বাতাস তাঁদের আগুন নেভানোর প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। অঞ্চলটিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টিও কম হয়েছে। এর ফলে আগুন খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে।
ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চের (আইএনপিই) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে গত ৯ জুন পর্যন্ত আগুন লাগার ঘটনা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি!
এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ব্রাজিলের কর্তৃপক্ষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। কারণ দাবানলের উচ্চ মৌসুম জুলাই মাস এখনো শুরুই হয়নি। মাতো গ্রোসো দো সুল প্রদেশের কর্তৃপক্ষ গত এপ্রিলেই পরিবেশগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বলেছিল- কম মাত্রার বৃষ্টিপাত এবার ওই প্রদেশে দাবানলের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছর মাতো গ্রোসো দো সুল প্রদেশে দাবানলের সংখ্যা ২০২০ সালের পর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ২০২০ সাল প্যান্টানাল অঞ্চলের জন্য খুবই খারাপ একটি বছর ছিল। সেবার ওই এলাকাটির প্রায় ৩০ শতাংশ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল।
পরিসংখ্যানে আরও দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যার পার্থক্য বিস্ময়কর। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ জুন পর্যন্ত প্যান্টানালে ১২৭টি অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গিয়েছিল। আর এবার একই সময়ের ব্যবধানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৩১৫ টি।
বিষয়টির ভয়াবহতা বোঝাতে গিয়ে স্থানীয় একটি এনজিওর কর্মকর্তা ভিনিসিয়াস সিলগুইরো সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, বর্ষাকালেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এতটা বেড়ে গেছে।’
সিলগুইরো আশঙ্কা প্রকাশ করেন- আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে শুষ্ক মৌসুম যখন পুরোপুরিভাবে বিরাজ করবে পরিস্থিতি তখন সম্ভবত আরও খারাপ হবে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত সপ্তাহেই ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে, তারা দাবানল মোকাবিলায় মাতো গ্রোসো দো সুল এবং আমাজোনিয়া প্রদেশের সরকারের সঙ্গে এবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। আগুন লাগার পর তা নেভাবে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং অগ্নিকাণ্ড শুরুর স্থান থেকেই আগুনের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন দেশটির পরিবেশ মন্ত্রী মেরিনা দা সিলভা।