গত কয়েক বছরের লোকসান মাথায় নিয়েই আম পরিবহনের জন্য পঞ্চমবারের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী হয়ে ঢাকা রুটে চালু হলো ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। সোমবার বিকেল ৪টায় চাঁপাইনাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে ১ হাজার ২০ কেজি আম নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা করে।
পরে সন্ধ্যা ৬টায় চাঁপাইনবাগঞ্জ স্টেশনে ৭৮৫ কেজি আম তুলে আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল ওদুদ। ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে সোমবার (১০ জুন) দিনগত রাত সোয়া ২টায় ঢাকায় পৌঁছাবে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক আহম্মেদ হোসেন মাসুদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএন) মোছা. তাছমিনা খাতুন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক, বিভাগীয় (পাকশী) ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ।
এদিকে গত চার বছরে ট্রেনটি আয়ের চেয়ে ব্যয় করেছে দ্বিগুণেরও বেশি।
পরিসংখ্যান বলছে, গত চার মৌসুমে লোকসানের পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, নিরাপদে স্বল্প সময় ও খরচে আম পরিবহনের লক্ষ্যে লোকসান মাথায় নিয়েই এই ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ চালু হলো।
ট্রেনটিতে ছয়টি লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে আম পরিবহন করা যাবে ২৮ দশমক ৮৩ টন। যাত্রা পথে রহনপুর স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, আব্দুলপুর, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গাসহ মোট ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে ট্রেনটি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম পরিবহনে ভাড়া লাগবে ১ টাকা ৪৭ পয়সা, রাজশাহী থেকে ১ টাকা ৪৩, পোড়াদহ থেকে ১ টাকা ১৯, রাজবাড়ি থেকে ১ টাকা ৭, ফরিদপুর থেকে ১ টাকা ১ এবং ভাঙ্গা থেকে ৯৮ পয়সা।
ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময় ও স্বল্প খরচে নিরাপদে আম পরিবহন করলেও লোকসান গুনছে রেলওয়ে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে চালু হওয়া এ স্পেশাল ট্রেন প্রতি বছরই লোকসান গুনছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে ৩ হাজার ৯৯৫ টন আম পরিবহন করা হয়েছে।
এর মধ্যে ২০২০ সালে ৪৭ দিনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয়েছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯ কেজি। এতে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৬ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ৪৯ দিনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয়েছে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৯২০ কেজি।
এতে আয় হয়েছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৯২৮ টাকা, আর ব্যয় হয়েছে ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০২২ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন আম পরিবহন করেছে ৭ দিন। এ সময় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭৮ কেজি আম পরিবহনে আয় হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৪ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ ৪০ টাকা। সবশেষ গত ২০২৩ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয়েছে ১৮ দিন। এ সময় ১২ লাখ ৭ হাজার কেজি আমে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫০২ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা। ফলে চার মৌসুমে ভাড়া বাবদ রেলের আয় হয়েছে মোট ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। তবে এ সময় ট্রেনটির তেল খরচ হয়েছে ৯২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। মাত্র চার বছরে ট্রেনের লোকসান হয়েছে ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ টাকা। তবে এত পরিমাণ আর্থিক লোকসান সত্ত্বেও সোমবার (১০ জুন) থেকে এই স্পেশাল ট্রেন ফের যাত্রা শুরু করল।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ‘স্পেশাল ট্রেনে করে আম পরিবহন নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে ব্যবসায়ীরা এটা থেকে তেমন সুফল পান না। কারণ এটি ডোর টু ডোর সার্ভিস দেয় না। আমাদের ডাক বিভাগের অনেক গাড়ি আছে। তাদের ডিজিটাল সিস্টেমও আছে। তারা যদি আন্তবিভাগীয় মিটিং করে আমগুলো ট্রেনে পরিবহনের পর আবার ডোর টু ডোর পরিবহন করে, তবেই এটি লাভজনক হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও এতে আগ্রহ দেখাবেন। ’
লোকসান প্রশ্নে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, ‘লোকসান হলেও স্থানীয় আমচাষি, ব্যবসায়ী ও খামারিদের সুবিধার্থে ট্রেনটি চালু করা হলো। ’