রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম (কাপ-পিরিচ) প্রতিক নিয়ে প্রতিদন্দীতা করেন। গত ৮মে বুধবার অনুষ্ঠিত হয় ভোট গ্রহণ, যেখানে তিনি পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনে ৬৭ হাজার ৮৮ ভোট পায় বেলাল উদ্দিন (সোহেল) তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন ২৪ হাজার ৩২৮ ভোট। অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম ২১ হাজার ১৩৪, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সুনন্দন দাস ১১ হাজার ৩৫ ভোট ও বিএনপি নেতা সাজেদুর রহমান খাঁন ২ হাজার ২৩০ ভোট পেয়েছেন।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলম অনুসারীদের অভিমত, যে ভোট পড়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় আওয়ামী লীগের মুল স্রোতের সিংহভাগ ভোট জাহাঙ্গীর, রবিউল ও সুনন্দন এই তিন প্রার্থীর বাক্সেই পড়েছে। কিন্ত্ত বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগবিরোধীদের ভোট পড়েছে বেলালের বাক্সে। এছাড়াও ভোটে সুক্ষকারচুপি হয়েছে। তারা বলেন, আওয়ামী লীগবিরোধী ও কারচুপির ভোটে বেলাল উদ্দিন সোহেল বিজয়ী হয়েছেন। ফলে বেলাল তার জনপ্রিয়তায় বিজয়ী হয়েছেন এমনটা নয়।
অন্যদিকে পরাজয়ের জন্য জাল ভোট দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে একজনকে একাধিক ব্যালটে সিল মারতে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে তিনি অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনা এক জায়গায় নয়; সব জায়গায় ঘটেছে। তা ছাড়া তার বাড়ি গোদাগাড়ী পৌর এলাকায়। তিনি সেখানে তৃতীয় হয়েছি। এটা অবিশ্বাস্য। তিনি পেয়েছেন ৭৫-৭৬টা করে ভোট আর তাঁরা পেয়েছে হাজারের বেশি ভোট। এটা কি সম্ভব ? একজন রানিং চেয়ারম্যান কী এমন খারাপ কাজ করল যে এতো কম ভোট পাবে ! আসলে তিনি পরাজিত হয়েছেন না কি ? কৌশলে তাকে পরাজিত করা হয়েছে, তা নিয়ে জনমনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, বইছে মুখরুচোক নানা গুঞ্জন।
স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও রবিউল আলমের বাড়ি একই এলাকায়। পৌর এলাকার ভোট তাঁদের দুজনের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। অন্যদিকে আরেক প্রার্থী সুনন্দন দাস পেয়েছেন ১১ হাজার ৩৫ ভোট। তাঁর বাড়ি পৌর এলাকা-সংলগ্ন মাটিকাটা ইউনিয়নে। আঞ্চলিকতার টানে একজন প্রার্থী যে ভোট পান, তাঁদের তিনজনের মধ্যে তা ভাগ হয়ে গেছে। অন্যদিকে বেলাল উদ্দিন সোহেল আওয়ামী লী বিরোধী ও সুক্ষ কারচুপির ভোটে বিজয়ী হয়েছে।
এছাড়াও জাহাঙ্গীরের পরাজয়ের পেছনে আরেকটি বিষয় সামনে এসেছে। সব কেন্দ্রে ভোটের আগের রাতে সব প্রার্থীর পোস্টার লাগানো ছিল। মধ্যরাতে বৃষ্টিতে সবার পোস্টার ধুয়ে যায়। পরদিন সকালে ১০৭টি কেন্দ্রে নতুন করে বেলাল উদ্দিন পোস্টার লাগালেও জাহাঙ্গীর ও রবিউলের পোস্টার সব কেন্দ্রে দেখা যায়নি। কোনো কোনো কেন্দ্রের সব বুথে জাহাঙ্গীর ও রবিউলের এজেন্ট ছিলেন না।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলমের পরাজয়ে আওয়ামী লীগের আদর্শিক,পরিক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। অনেকে বলছে,দলে অনুপ্রবেশকারি,মতলববাজ সুযোগসন্ধানী এবং বর্ণচোরাদের ভিড়ে আদর্শিক, ত্যাগী পরিক্ষিত নেতাকর্মীরা অবহেলিত ও বঞ্চিত থাকায় তার পরাজয়ের একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগের ছায়ায় থেকে যারা মোটাতাজা হয়েছে সময়মত তারা খোলস পাল্টিয়েছে। এমনকি এমপির ছায়ায় থেকে তার আর্শিবাদে যারা মোটাতাজা হয়ে গোপণে আওয়ামী লীগবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করেছে। এখন অন্য ডালে বাঁসা বেঁধে, আগামিতে এমপিকে সরিয়ে তার স্থানে অধিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখছে বলেও আলোচনা রয়েছে। তৃণমুলের ভাষ্য, এখন সময় এসেছে বর্ণচোরাদের লাগাম টেনে ধরার। নইলে আগামিতে আওয়ামী লীগের জন্য অসনি সঙ্কেত অপেক্ষা করছে। যারা তাদের সৃষ্টির পেছনের গল্প ভুলে যায়, তারা নিজের স্বার্থের জন্য যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় মিশে যেতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমুল।
স্থানীয়রা বলছে, জাহাঙ্গীর আলমের পরাজয় চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়েছে। আওয়ামী লীগ হওয়া যায় না, আওয়ামী লীগ রক্তে থাকতে হয়। ত্যাগীরা অভিমনি হয়, কিন্ত্ত দল ও আদর্শের সঙ্গে কখানো বিশ্বাসঘাতকতা করে না। আদর্শিক, পরিক্ষিত, ত্যাগী এবং নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও যথাযথ মুল্যায়ন করে আবারো সক্রিয় করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
এদিকে গোদাগাড়ী আওয়ামী লীগের
রাজনীতিতে অনেক সময় অনেক কিছু হয়েছে। কিন্ত্ত জাহাঙ্গীর আলম কখানোই কোনো লোভ-লালসার স্রোতে গা-ভাঁসিয়ে দেননি। তিনি সব সময় মুল স্রোতের সঙ্গে থেকেছেন এখানো আছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা ও কর্মী-সমর্থকেরা সাংসদের পৃষ্ঠপোষকতায়
জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামিতে ঘুরে দাঁড়াতে বদ্ধ পরিকর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ১৯৮৯ সালে জাহাঙ্গীর আলম গোদাগাড়ী স্কুল এ্যান্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, বিগত ১৯৯১ সালে গোদাগাড়ী ডিগ্রী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও বিগত ১৯৯৩ সালে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, বিগত ১৯৯৭ গোদাগাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, বিগত ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলা যুবলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, বিগত ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক এবং বিগত ২০১৬ থেকে গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করে চলেছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে উঠে আশা একজন আদর্শিক, সফল কর্মী-জনবান্ধব রাজনৈতিক নেতা জাহাঙ্গীর আলম।
এদিকে আওয়ামী লীগবিরোধীদের ভোটে নির্বাচিত হয়েই বেলাল উদ্দিন সোহেল বিতর্কে জড়িয়ে গোদাগাড়ীর মানুষকে হতাশায় ডুবিয়েছে। তিনি শুল্ক ফাঁকি দিতে গোখাদ্যর আড়ালে মানুষের খাবার গুড় আমদানি। এছাড়াও দায়িত্ব গ্রহণের দিন আওয়ামী চেতনাবিরোধী ও নতুনমুখের মানুষদের নিয়ে অনুমতি ব্যতিত সমাবেশ করে বির্তকের সৃষ্টি করেছেন। গোদাগাড়ীর মানুষ এসব নানা কারণে বেলালকে উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।