মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় সাথীর দুগ্ধ খামার থেকে


আহম্মদ মোস্তফা শিমুল: , আপডেট করা হয়েছে : 02-04-2022

মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় সাথীর দুগ্ধ খামার থেকে

রাজশাহী নগরীর মথুরডাঙ্গা এলাকার রাবেয়া আকতার সাথী অভাব অনটনের সংসারে মায়ের দেওয়া একমাত্র গরুকে অবলম্বন করে শুরু আস্তে আস্তে গড়ে তোলেন খামার। তার সেই খামারে এখন ১৪টি গাভি ও ১২টি বাছুর। প্রতি মাসে ঘরে বসে সাথীর আয় এখন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সাথী এখন সফল দুগ্ধ খামারি। তার বাবার বাড়ি নগরীর উপকণ্ঠ পবার পারিলা ইউনিয়নের মাড়িয়া দক্ষিণপাড়ায়। সেখানেই গড়ে তুলেছেন ‘সাথী ডেইরি ফার্ম’। সব প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে ১৭ বছর ধরে লেগে থাকার ফল পেয়েছেন অদম্য এই নারী।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বোনের মধ্যে সাথী ছিলেন দ্বিতীয়। ২০০০ সালে তিনি সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। বিয়ের সময় স্বামী মো. সোহাগ ছিলেন বেকার। স্যানেটারি মিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু সংসারে অভাব লেগেই ছিল। বছর দুয়েকের মাথায় জন্ম হয় মেয়ে সুমাইয়া খাতুনের। এদিকে প্রিয় নানতনিকে দুধের গাভি উপহার হিসেবে দেন সাথীর মা। সেই থেকে শুরু হয়ে আজ তা খামারে রূপ নেয়।

সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে তিনি খামার গড়ে তুলেছেন। যেসব নারী সল্প শিক্ষিত কিংবা সংসার অসচ্ছল, তারা খামার গড়ে ভাগ্য বদলাতে পারেন। লেগে থাকলে সফলতা আসবেই। সাথীর মেয়ে সুমাইয়া রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর ছেলে সাব্বির আহমেদ নগরীর আটকোশি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। খামারের আয়ের টাকায় সাথী এখন ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে সংসার সামলাচ্ছেন।

সাথী জানান, তার খামারে স্থায়ী কোনো কর্মী নেই। তিনি নিজ হাতেই খামারের সব কাজ দেখাশোনা করেন। দুধও দোহান করেন নিজেই। স্বামী এবং ছেলে-মেয়েরা খামারের টুকটাক কাজে সহায়তা করেন। সবার পরিশ্রমে এত দূর এসেছেন সাথী।

দীর্ঘ এই যাত্রার পথটা সহজ ছিল না জানিয়ে সাথী বলেন, শ্বশুরবাড়ি মথুরডাঙায় তার খামারে যখন ৭টা গাভি হয়, তখন বাবার বাড়ির পাশে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে খামার সরিয়ে নেন। সেখানে আরও পরিশ্রম করেন। এখন তার খামারে ১৪টি গাভি এবং ১২টি বাছুর। সব গাভি দুধ দিচ্ছে। গড়ে প্রতিটি গাভি থেকে ৭-৮ লিটার দুধ পাওয়া যায়। 

মাসিক আয়ের বিষয়ে সাথী জানান, দৈনিক প্রায় ১১০ লিটার দুধ পাচ্ছেন। প্রতি লিটার ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেন। সে হিসাবে দিনে ৮ হাজার ২৫০ টাকার দুধ বিক্রি করেন। তাতে খরচ বাদ দিলে দৈনিক আয় ৫ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসিক আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

সাথী বলেন, এখন খাবারের দাম বাড়তি। অন্যান্য খরচও বেড়েছে। তবু যাবতীয় খরচ বাদে খামার থেকে আমার মাসে আয় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ আসে খামার থেকেই। কিছু টাকা সঞ্চয়ও করেছি। কিছু জমিও কিনেছি খামারের আয় থেকে টাকা বাঁচিয়ে।

কেবল গরুর খাবার জোগাতে মাত্র ৩০ টাকা কেজি দরে দুধ বিক্রি করেছেন। কিছু পরিচিত ক্রেতা ছিল। তাদের বাড়ি বাড়ি দুধ পৌঁছে দিয়েছেন। কোনোরকম টিকে ছিলেন ওই সময়টায়। এখন আর ওই সংকট নেই জানিয়ে সাথী বলেন, করোনকালে কঠিন সময় কাটিয়েছি। লকডাউনে মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ ছিল। কেউ দুধ নেয়নি। সাধারণ ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছিল না। নিরুপায় হয়ে বাড়ির পাশের কাঁচা বাজারে একাই দাঁড়িয়ে দুধ বিক্রি করেছি।

উল্টো স্রোতে চলা সাথী এখন এলাকার নারীদের অনুপ্রেরণা। বিষয়টি ভাবতে ভালোই লাগে তার। সাথী বলেন, এখনকার মেয়েরা পড়াশোনা শেষে চাকরির চেষ্টা করেন। চাকরি না পেলে কেবল স্বামী-সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। কেউ কেউ ব্যবসায় নামছেন এখন। কিন্তু খামারে নামছেন, এমন নারীর সংখ্যা কম। অনেকেই এই কাজটা নোংরা ভাবেন। খামার গড়ে তোলা কষ্টসাধ্য। কিন্তু অসাধ্য নয়। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে তিনি খামার গড়ে তুলেছেন। যেসব নারী সল্প শিক্ষিত কিংবা সংসার অসচ্ছল, তারা খামার গড়ে ভাগ্য বদলাতে পারেন। লেগে থাকলে সফলতা আসবেই বলে পরামর্শ দেন সাথী।

রাজশাহীর সময় / এম জি


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]