সুরা ইনশিকাক কোরআনের ৮৪তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ২৫টি। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। মক্কায় অবতীর্ণ অন্য সুরাগুলোর মতোই সুরা ইনশিকাকে প্রধানত ইমান ও কুফর, কেয়ামতের ভয়াবহতা, আখেরাতের হিসাব নিকাশ, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের পরিণতি ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। সুরার শুরুতে কেয়ামতের ভয়াবহতা, বিশ্বজগতে কী কী পরিবর্তনের মাধ্যমে কেয়ামত শুরু হবে তা উল্লেখিত হয়েছে। এরপর কেয়ামতের হিসাব-নিকাশ ও মানুষের দুইভাবে ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারো হিসাব হবে সহজ, কারো হিসাব কঠিন হবে। কেউ পুরস্কৃত হবে, কেউ শাস্তির মুখে পড়বে। সুরার শেষে আল্লাহ তাআলা অবিশ্বাসীদের ইমান গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
সুরা ইনশিকাকের ১৬-২৫ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
(১৬)
فَلا أُقْسِمُ بِالشَّفَقِ
ফালা উকসিমু বিশ-শাফাক।
আমি শপথ করি অস্তরাগের
(১৭)
وَاللَّيْلِ وَمَا وَسَقَ
ওয়াল্লাইলি ওয়ামা ওয়াসাক।
আর রাতের শপথ এবং রাত যা কিছুর সমাবেশ ঘটায় তার।
(১৮)
وَالْقَمَرِ إِذَا اتَّسَقَ
ওয়াল কামারি ইযাত্তাসাক।
এবং শপথ চাঁদের, যখন তা পূর্ণরূপ লাভ করে,
(১৯)
لَتَرْكَبُنَّ طَبَقاً عَنْ طَبَقٍ
লাতারকাবুন্না তাবাকান আন তাবাক।
অবশ্যই তোমরা এক স্তর থেকে অন্য স্তরে আরোহণ করবে।
(২০)
فَمَا لَهُمْ لا يُؤْمِنُونَ
ফামা লাহুম লা ইউমিনূন।
অতএব, তাদের কি হল যে, তারা ঈমান আনে না?
(২১)
وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنُ لا يَسْجُدُونَ
ওয়া ইযা কুরিআ আলাইহিমুল কুরআনু লা ইয়াসজুদূন
যখন তাদের কাছে কোরআন পাঠ করা হয়, তখন সেজদা করে না। (এটা সিজদার আয়াত)
(২২)
بَلِ الَّذِينَ كَفَرُوا يُكَذِّبُونَ
বালিল্লাযীনা কাফারূ ইউকাযযিবূন।
(কুরআন শুনে সেজদা করা তো দূরের কথা) বরং কাফিররা তা অস্বীকারই করে।
(২৩)
وَاللهُ أَعْلَمُ بِمَا يُوعُونَ
ওয়াল্লাহু আ‘লামু বিমা ইয়ূ‘ঊন।
আর তারা যা অন্তরে পোষণ করে আল্লাহ তা সবিশেষ পরিজ্ঞাত।
(২৪)
فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
ফাবাশশিরহুম বি‘আযাবিন আলীম।
অতএব, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।
(২৫)
إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
ইল্লাল্লাযীনা আমানূ ওয়া আমিলুস সালিহাতি লাহুম আজরুন গাইরু মামনূন।
কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:
১. দুনিয়া ও আখেরাতে মানুষকে কঠিন থেকে কঠিন পর্যায় অতিক্রম করতে হবে। অবশেষে সে জান্নাত লাভ করবে অথবা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
২. মানুষের তার স্রষ্টার ওপর ইমান না আনা আশ্চর্যজনক। যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, এত নেয়ামত দান করেছেন, তার পক্ষ থেকে রাসুল ও কিতাব আসার পরও তারা অবিশ্বাসের মধ্যে ঘুরপাক খায়!
৩. কোরআনে কিছু আয়াত আছে যেগুলো পড়লে বা শুনলে সিজদা করা ওয়াজিব। সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা করার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
إِذَا قَرَأَ ابْنُ آدَمَ السَّجْدَةَ فَسَجَدَ اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِي يَقُولُ يَا وَيْلَهُ أُمِرَ ابْنُ آدَمَ بِالسُّجُودِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ وَأُمِرْتُ بِالسُّجُودِ فَأَبَيْتُ فَلِيَ النَّارُ
মানুষ যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদা দেয়, শয়তান তখন কাঁদতে কাঁদতে দুরে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে হায়! দুর্ভাগ্যা! মানুষকে সিজদার নির্দেশ দেওয়া হলো, তারা সিজদা করলো, এর বিনিময়ে তারা জান্নাত লাভ করবে। আমাকে সিজদার নির্দেশ দেওয়া হলে কিন্তু আমি তা অস্বীকার করেছিলাম, ফলে আমি যাবো জাহান্নামে। (সহিহ মুসলিম: ৮১)
৪. আল্লাহ অন্তর্যামী; অন্তরে মানুষ যা পোষণ করে তা তিনি জানেন। তাই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য ইমান ও আমল যেমন লৌকিকতা, দুনিয়াবি স্বার্থ ইত্যাদি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও নির্ভেজাল হতে হবে, অন্তর থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, শত্রুতা, অহংকার ইত্যাদিও দূর করতে হবে।