দেশীয় শ্রমিকবান্ধব বিড়ি শিল্পকে রক্ষায় নকল বিড়ি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ এবং বিড়ি শিল্পে শুল্ক প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে পাবনা জেলা বিড়ি মজদুর ইউনিয়ন। সকাল ১১ টায় পাবনা জেলা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিসের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মানববন্ধন শেষে পাবনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের ডেপুটি কমিশনার বরাবর পাঁচ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন শ্রমিকরা। তাদের দাবিগুলো হলো-পাবনা জেলার সর্বাধিক রাজস্ব ফাঁকিদানকারী সিহাব, মধু, বাংলা বিড়ির উৎপাদনের সাথে সংগতি রেখে শতভাগ রাজস্ব বৃদ্ধি, রাজস্ব ঘাটতিকারী স্পেশাল রাজা, রাজা, নুরজাহান, মহব্বৎ বিড়ি, নূরমহল, জামাল, নাহিদ, শ্রমিক বিড়ির অনতিবিলম্বে রাজস্ব প্রৃবৃদ্ধি, চলতি বাজেটে বিড়ি শিল্পের উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার ও সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যে বিড়ি বিক্রয় নিশ্চিত করণ, বিদেশী কোম্পানির নিম্নস্তরের সিগারেট বন্ধ এবং পাবনাসহ দেশব্যাপী জাল/নকল ও ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল দিয়ে বিড়ি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করা।
বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা বিড়ি মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ হারিক হোসেনের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাবনা বিড়ি মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামীম ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পাবনা জেলা বিড়ি মজদুর ইউনিয়নের উপদেষ্টা মজিবুর রহমান, শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহবায়ক আবুল বাসার মাষ্টার, শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, জেলা বিড়ি মজদুর ইউনিয়নের সহসভাপতি রানী খাতুন, মজদুর ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী, জেলা বিড়ি মজদুর ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল শেখ, কোষাধ্যক্ষ টোকন রায়, শ্রম সম্পাদক চামেলি খাতুন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিড়ি শিল্প দেশের প্রাচীন শ্রমঘন একটি শিল্প। এই শিল্পের ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ সরকার সিগারেট এর সাথে বৈষম্য রেখে যে পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছে; সেখান থেকে বেরিয়ে এসে বিড়ি মালিকদের যেমন বিড়ি উৎপাদন দিয়ে কারখানা সচল রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে; তেমনি এই শিল্পের সাথে সারাদেশে জড়িত ১৮ লক্ষ হতদরিদ্র, স্বামী পরিত্যক্তা, শারীরিক বিকলাঙ্গ বিড়ি শ্রমিকদের কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ হয়ে পড়েছে চরম শঙ্কাটাপূর্ণ।
বক্তারা বলেন,‘এই শিল্পের তলানিতে শেষ পেরেক মারার কাজ করছে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি তাদের কিছু দালালদের বিড়ি উৎপাদনের নাম করে কাস্টমস এর কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে লে-আউট বিহীন কারখানার নিবন্ধন পাইয়ে দিয়ে নকল/জাল বা পুনঃব্যবহৃত ব্যাঙ্গোল ব্যবহার করে বিড়ি উৎপাদন করে কমদামে ৫-৮ টাকা মূল্যের বিড়িতে বাজার ছয়লাব করে দিচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রকৃত ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে বিড়ি উৎপাদনকারী বিড়ি কোম্পানিগুল্যের বিড়ি মানহীন তামাক ও কাঁচামাল দিয়ে নকল বিড়ি উৎপাদন করে বাজারজাত করার মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়েও চাহিদা নষ্ট করছে; যার ফলস্বরূপ কোম্পানিগুলো তাদের কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারছে না। ফলে আমাদের শ্রমিকেরা প্রতিদিন তাদের কর্ম হারাচ্ছে।
এছাড়া স্পেশাল রাজা বিড়ি, রাজা বিড়ি, বাংলা বিড়ি, নুরজাহান বিড়ি, জামাল বিড়ি, নূরমহল বিড়ি, নাহিদ বিড়ি, শ্রমিক বিড়িসহ বিভিন্ন কোম্পানিগুলো রাজস্ব প্রদানে কোন প্রকার প্রবৃদ্ধি জায়গায় বরঞ্চ ঘাটতিতে কেউ কেউ ৪০ শতাংশ ও অতিক্রম করেছে। তারপরও জেলার রাজস্ব কর্মকর্তাগণ তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার কার্যকরি প্রতিকার পদক্ষেপ নিতে নারাজ। এসব বিড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাস্টমস কর্মকর্তাদের নিকট অনুরোধ করছি।
শ্রমিকরা আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই শিল্পের দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল। তিনি এই শ্রমঘন শিল্পটি শুল্কমুক্ত ঘোষণা করেছিলেন। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর সময়ের মত জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলেও বিড়ি শিল্পের উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করার আহবান জানাচ্ছি। একইসাথে সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যে বিড়ি বিক্রয় নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বর্তমানে নিম্নস্তরের সিগারেট টোব্যাকো মার্কেটের ৭৫ শতাংশ দখল করে আছে। এসব নিম্নস্তরের সিগারেট ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির। সুতরাং দেশীয় শ্রমঘন বিড়ি শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার্থে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর নিম্নস্তরের সিগারেট উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।