রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে মারামারি ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন বিভাগের তিন জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে রাবির চারুকলার এই ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থীদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ শেখ বন্ধন এবং গ্রাফিক ডিজাইন ও কারুশিল্প বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান পুলক ও পেন্টিং ওরিয়েন্টাল আর্ট ও প্রিন্টমেকিং বিভাগের ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অপু।
জানা গেছে, বন্ধন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অন্যদিকে পুলক বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চারুকলা অনুষদ চত্ত্বরের মুক্ত মঞ্চের পিছনে সৌরভ শেখ বন্ধন বান্ধবীসহ গাঁজা সেবন করছিলো। অপু ও পুলক বন্ধনকে গাঁজা সেবনে বাধা দেওয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি লাগলে মেহেদী হাসান পুলক সৌরভ শেখ বন্ধনের মাথায় হেলমেট দিয়ে আঘাত করলে বন্ধনের মাথা হালকা কেটে রক্তপাত হয়।পরবর্তীতে সৌরভ শেখ বন্ধন আহত অবস্থায় তার বন্ধুদের ফোনে জানালে ১০/১৫ জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অপু ও পুলককে মারধর করে আহত করে এবং চারুকলা চত্ত্বেরর রফিকের দোকান ভাঙচুর করে।
এ ঘটনায় মেহেদী হাসান পুলক বলেন, তারা চারুকলার মুক্তমঞ্চের পিছনে বসে গাঁজা সেবন করছিলো। আমি এবং অপু ভাই তাদেরকে মানা করলে একটা সময় তারা আমার সাথে ধাক্কাধাক্কি করে। এক পর্যায়ে ওরা আমকে মারধর করা শুরু করে। এক পর্যায়ে মারামারি করতে করতে আমরা পাশের রফিক ভাইয়ের দোকানে চলে যাই। পরে আমি সবাইকে ফোন দিয়ে আসতে বলি। রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গালিব ভাইকেও আসতে বলি। এদিকে বন্ধনরা বাঁশ, লাঠি হাতে প্রায় ৪০/৫০ জন জড়ো হয়ে রফিক ভাইয়ের দোকানে এসে আমাকে মারধর শুরু করে। অপু ভাইকেও মারধর করে। অপু ভাইয়ের গাড়ি ভাঙচুর করে। আমি তাদেরকে এভাবেও বলি যে গালিব ভাইরা আসছেন, তারা আসলে কথা বলি কিন্তু তারা শুনেনি, তারা মারধর করতে থাকে। তারপর চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে এসেও নামতে পারছিলাম না। তারপরে ভাইরা আসলো পরে চিকিৎসা নেই।
অন্যদিকে বন্ধন গাঁজা খাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, চারুকলায় অবস্থানকালে হঠাৎ ক্যাম্পাসের কয়েকজন আমার কাছে জানতে চায় তোরা কারা? কি করতে এসেছিস এখানে? আমরা নিজেদের পরিচয় দেওয়ার পর তাদের সাথে কথা-কাটাকাটি হয়। তারপর সেখানে অপু ভাই এবং পুলক ভাই উপস্থিত হয়। তখন তারা আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে এবং আমার কাপড় ধরে টানাটানি করে এবং চর থাপ্পর দেয়৷ তখন আমার জামা ছিঁড়ে যায়। তখন তাদের মধ্যে একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং মাথা ফাটিয়ে দেয়।
এদিকে দোকানদার রফিক বলেন, বন্ধনরা আমার দোকান ভাঙচুর করে এবং ৫-৬ হাজার টাকা নিয়ে যায়। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, "বিষয়টি শুনার পর আমি দুজন সহকারী প্রক্টর পাঠাই সেখানে। তারা আহতদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রক্টর দপ্তরে নিয়ে আসেন। পরে দুই গ্রুপকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করি এবং তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেই।"
চারুকলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন,আমি এবং আরও কয়েকজন অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ঘটনার কথা শুনে এখানে আসার পর শুনি বহিরাগতরা(ওরা কারা কোন ডিপার্টমেন্ট আমি জানিনা) বসে গাজা খাচ্ছিলো। আমাদের কিছু ছাত্র এখানে বসা ছিল তারা গাজা খেতে নিষেধ করাতে এখানে বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়।