সুরা মুতাফফিফীন কোরআনের ৮৩তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ৩৬টি। সুরা মুতাফফিফীন মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। ‘মুতাফফিফীন’ শব্দটি ‘মুতাফফিফ’ শব্দের বহুবচন, অর্থ ওজনে কম দেয় এমন ব্যক্তি। ওজনে কম দেয় এমন ব্যক্তিদের শাস্তির ঘোষণা দিয়ে শুরু হয়েছে সুরাটি। সুরাটিতে আরও আলোচিত হয়েছে, কেয়ামতের দিনের ভয়াবহতা, নেক ও বদ আমলকারীদের আখেরাতের ঠিকানা, মুমিনদের আখেরাতের বিভিন্ন নেয়ামত, কাফেরদের শাস্তি ইত্যাদি।
সুরা মুতাফফিফীনের ১-৬ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
(৭)
كَلَّا إِنَّ كِتَابَ الْفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٍ
কাল্লা ইন্না কিতাবাল ফুজ্জারি লাফী সিজ্জীন।
না, নিঃসন্দেহে পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জীনে আছে।
(৮)
وَمَا أَدْرَاكَ مَا سِجِّينٌ
ওয়া মা আদরাকা মা সিজ্জীন।
আপনি জানেন, সিজ্জীন কি?
(৯)
كِتَابٌ مَرْقُومٌ
কিতাবুম মারকুম।
তা চিহ্নিত আমলনামা।
(১০)
وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِلْمُكَذِّبِينَ
ওয়াইলুইঁ ইয়াওমাইযিল লিলমুকাযযিবীন।
সেই দিন দুর্ভোগ হবে অস্বীকারকারীদের,
(১১)
الَّذِينَ يُكَذِّبُونَ بِيَوْمِ الدِّينِ
আল্লাযীনা ইউকাযযিবূনা বিইয়াওমিদ্দীন।
যারা কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করে,
(১২)
وَمَا يُكَذِّبُ بِهِ إِلَّا كُلُّ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ
ওয়া মা ইউকাযযিবু বিহী ইল্লা কুল্লু মু‘তাদিন আসীম।
কেবল প্রত্যেক পাপিষ্ঠ সীমালংঘনকারী এটা অস্বীকার করে;
(১৩)
إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِ آيَاتُنَا قَالَ أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ
ইযা তুতলা আলাইহি আয়াতুনা কালা আসাতীরুল আওওয়ালীন।
তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে সে বলে, এটা আদিকালের উপকথা।
(১৪)
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
কাল্লা বাল রানা আলা কুলূবিহিম মা কানূ ইয়াকসিবূন।
কখনও না, বরং তারা যা করে, তাই তাদের হৃদয়ে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।
(১৫)
كَلَّا إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ
কাল্লা ইন্নাহুম আর রাব্বিহিম ইয়াওমাইযিল লামাহজূবূন।
কখনও না, তারা সেদিন তাদের রবের থেকে পর্দার অন্তরালে থাকবে।
(১৬)
ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُوا الْجَحِيمِ
সুম্মা ইন্নাহুম লাসালুল জাহীম।
অতঃপর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
(১৭)
ثُمَّ يُقَالُ هَذَا الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تُكَذِّبُونَ
সুম্মা ইউকালূ হাযাল্লাযী কুনতুম বিহী তুকাযযিবূন।
এরপর বলা হবে, একেই তো তোমরা মিথ্যারোপ করতে।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:
১. পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জিনে আছে। সিজ্জিন হলো সমস্ত অকল্যাণ ও মন্দ কাজের নথি বা খাতা; যেখানে শয়তান, কাফের ও ফাসেকদের সব অপকর্মের বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে।
২. মৃত্যুর পর মানুষ পুনরায় জীবিত হয়ে হিসাব-নিকাশের জন্য আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে এটা যারা বিশ্বাস করে না, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, আখেরাত অস্বীকার করে, কেয়ামতের দিন তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
৩. যারা অনবরত গুনাহ করতে থাকে, তওবা করে না, তারা তওবার তওফিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মুমিন বান্দা যখন গুনাহ করে তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। এরপর সে তওবা করলে তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়, আর যদি বারবার গুনাহ করে, তাহলে কালো দাগও বাড়তে থাকে, এক পর্যায়ে তা তার পুরো অন্তর ঢেকে ফেলে। এটা সেই মরিচা যে ব্যাপারে কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
তারা যা করে, তা তাদের হৃদয়ে মরচে ধরিয়ে দিয়েছে। (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৩৪)
৪. কেয়ামতের দিন মুমিন ও নেক বান্দারা আল্লাহকে দেখার মহাসৌভাগ্য লাভ করবে। অবিশ্বাসী ও পাপাচারীরা আল্লাহকে দেখতে পাবে না।