পুকুরের শহর রাজশাহীতে পুকুর ভরাট অব্যাহত, বাড়ছে উষ্ণতা


নিজস্ব প্রতিবেদক: , আপডেট করা হয়েছে : 04-05-2024

পুকুরের শহর রাজশাহীতে পুকুর ভরাট অব্যাহত, বাড়ছে উষ্ণতা

পুকুরের শহর রাজশাহী। এক সময় রাজশাহী মহানগরীতে কয়েক হাজার পুকুর ছিল। এক দশক আগে তা ৯৫২টিতে নেমে আসে। ভরাট হতে হতে বর্তমানে অল্পকিছু পুকুর টিকে আছে। রাজশাহীতে পুকুর ভরাট ও দখল নিয়ে ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৮ আগস্ট রাজশাহী শহরের পুকুরগুলো সংরক্ষণের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। সিটি মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক ও র‌্যাবকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পুকুর ভরাট থামেনি। ফলে বাড়ছে উষ্ণতা। প্রতিনিই রাতের আধারে নগরীরতে চলছে পুকুর ভরাট। পুকুর ভরাট প্রসঙ্গ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই রাজশাহীর বিভিন্ন প্রত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পুকুরে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর আবার শুরু হচ্ছে পুকুর ভরাট। সম্প্রতি নগরীর দায়রা পার্ক এলাকায় সাড়ে চার বিঘার ছিল নাটোরের গোলাম মাওলা নামের এক ব্যক্তির। পরে কয়েক ব্যক্তি এটি কিনে নেন। ক্রেতাদের একজন বাগমারার আত—তিজারা গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম। আত—তিজারা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি লিমিটেড নামে তার আবাসন ব্যবসা আছে।

যোগাযোগ করা হলে আবদুল হালিম বলেন, ‘কেনার পর বাড়ি করার জন্য কয়েক বন্ধু মিলে পুকুরটি ভরাট করেছি। এর শ্রেণি এখনো পুকুরই আছে। শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হয়নি।’ আইনে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ— এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

পুকুরটি ভরাটের সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের একদল কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিন বলেছিলেন, পুকুরটির ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে তিনি অধীনস্থদের নির্দেশনা দিয়েছেন। পুকুর ভরাট করা হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

একবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরও পুকুর ভরাট কার্যক্রম চলমান থাকার কথা শুনে জেলা প্রশাসক মোঃ শামীম আহমেদ বলেছিলেন, তিনিও কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু পরে আর কেউ কোনো ব্যবস্থা নেননি।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এসএ শাখার নথি অনুযায়ী, পুকুরটি বিক্রির আগে নাটোরের গোলাম মাওলা জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেন। শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে কি না, তা তদন্তপূর্বক মতামত দেওয়ার জন্য ১২ মার্চ রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শাম্মী আক্তার নগরীর বোয়ালিয়া থানার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) চিঠি দিয়েছেন। চিঠি অনুযায়ী, জমির পরিমাণ দেড় একর।

পুকুর ভরাট শেষ, বর্তমানে সেখানে কলাগাছ লাগানো হয়েছে। এখন শ্রেণি পরিবর্তন করে দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোঃ শামীম আহমেদ বলেন, আবেদন যে কেউ করতে পারে; কিন্তু আইন অনুযায়ী আবেদন গ্রহণ হবে কি না সেটি বিষয়। এ পুকুরটা ভরাটের খবর পেয়ে একবার ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছিল। পরে ভরাট হয়ে গেছে কি না তা জানি না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক তন্ময় কুমার সান্যাল বলেন, শহরের সব জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন। তাদের গাফিলতির কারণে সব পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে রাজশাহীর আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। শীতে এখানে অতিরিক্ত শীত, গ্রীষ্ণে অতিরিক্ত গরম। সেজন্য জলাশয় দরকার। তা না হলে রাজশাহীর পরিবেশ আরও খারাপ হয়ে উঠবে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]