সুরা আবাসা কোরআনের ৮০তম সুরা, এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৪২, রুকু তথা অনুচ্ছেদ ১টি। সুরা আবাসা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুরা আবাসার শানে নুজুল সম্পর্কে উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, এ সুরাটি অন্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) সম্পর্কে মক্কায় নাজিল হয়। তিনি কোনো একটি বিষয় জানার জন্য আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে আসেন। ওই সময় আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জনৈক মুশরিক নেতার সাথে কথা বলছিলেন। এভাবে কথার মধ্যে কথা বলায় (অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনে উম্মে মাকতুম পীড়াপীড়ি করায়) আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিরক্ত হন এবং তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ওই নেতার দিকে মনোযোগ দেন, যাতে তিনি হেদায়াত লাভ করেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুরা আবাসা নাজিল হয়। (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৩১)
এ সুরার শুরুতে আল্লাহ তাআলা ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি সমান আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ দরিদ্র ও প্রভাবহীন বলে তাকে অবহেলা করতে এবং প্রভাবশালী ও সম্পদশালী কাউকে বেশি গুরুত্ব দিতে নিষেধ করেছেন। বরং আল্লাহর কাছে আনুগত্যে আগ্রহী দরিদ্র ও প্রভাবহীন বান্দার মূল্য ধনবান অবাধ্য ও উদ্ধত বান্দার চেয়ে অনেক বেশি।
সুরা আবাসার ১৭-৩২ আয়াতে আল্লাহর নেয়ামত ও মানুষের অকৃতজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
(১৭)
قُتِلَ الْإنْسَانُ مَا أَكْفَرَهُ
কুতিলাল ইনসানু মা আকফারাহ।
মানুষ ধ্বংস হোক, সে কত অকৃতজ্ঞ!
(১৮)
مِنْ أَيِّ شَيْءٍ خَلَقَهُ
মিন আইয়ি শাইয়িন খালাকাহ।
তিনি তাকে কোন বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন?
(১৯)
مِنْ نُطْفَةٍ خَلَقَهُ فَقَدَّرَهُ
মিন নুতফাতিন খালাকাহূ ফাকাদ্দারাহ।
শুক্র থেকে তাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে সুপরিমিত করেছেন।
(২০)
ثُمَّ السَّبِيلَ يَسَّرَهُ
সুম্মাস-সাবীলা ইয়াসসারাহ।
অতঃপর তার পথ সহজ করেছেন,
(২১)
ثُمَّ أَمَاتَهُ فَأَقْبَرَهُ
সুম্মা আমাতাহূ ফাআকবারাহ।
অতঃপর তার মৃত্যু ঘটান ও কবরস্থ করেন তাকে।
(২২)
ثُمَّ إِذَا شَاءَ أَنْشَرَهُ
সুম্মা ইযা শাআ আনশারাহ।
এরপর যখন ইচ্ছা করবেন তখন তাকে পুনর্জীবিত করবেন।
(২৩)
كَلاَّ لَمَّا يَقْضِ مَا أَمَرَهُ
কাল্লা লাম্মা ইয়াকদি মা আমারাহ।
সে কখনও কৃতজ্ঞ হয়নি, তিনি তাকে যা আদেশ করেছেন, সে তা পূর্ণ করেনি।
(২৪)
فَلْيَنْظُرِ الْإنْسَانُ إِلَى طَعَامِهِ
ফালইয়ানজুরিল ইনসানু ইলা তাআমিহ।
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক,
(২৫)
أَنَّا صَبَبْنَا الْمَاءَ صَبّاً
আন্না সাবাবনাল মাআ সাব্বা।
আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি,
(২৬)
ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقّا
সুম্মা শাকাকনাল আরদা শাক্কা।
এরপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি,
(২৭)
فَأَنْبَتْنَا فِيهَا حَبّاً
ফাআমবাতনা ফীহা হাব্বা।
অতঃপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য,
(২৮)
وَعِنَباً وَقَضْباً
ওয়া ইনাবাওঁ ওয়া কাদবা।
আঙ্গুর, শাক-সবজি,
(২৯)
وَزَيْتُوناً وَنَخْلاً
ওয়া ঝাইতূনাওঁ ওয়া নাখলা।
জয়তুন, খেজুর,
(৩০)
وَحَدَائِقَ غُلْباً
ওয়া হাদাইকা গুলবা।
ঘন গাছপালাময় উদ্যান,
(৩১)
وَفَاكِهَةً وَأَبّاً
ওয়া ফাকিহাতাওঁ ওয়া আব্বা।
ফল এবং ঘাস
(৩২)
مَتَاعاً لَكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ
মাতাআল্লাকুম ওয়ালি আনআমিকুম।
তোমাদেরও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপাকারার্থে।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:
১. আল্লাহর অসীম কুদরত, প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের বিভিন্ন নিদর্শন আমাদের ঘিরে রেখেছে। এ নিদর্শনগুলো থেকেই তার অস্তিত্ব, তার মর্যাদা ও ক্ষমতার বিশালতা উপলব্ধি করা যায়।
২. আল্লাহর সৃষ্টি তার অস্তিত্বের প্রমাণ। কাফেরদের এ উদাসীনতা ও অকৃতজ্ঞতা বিস্ময়কর যে তারা আল্লাহ তাআলার সব রকম নেয়ামত ভোগ করেও তার অস্তিত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হয় না, তার ওপর ইমান আনে না।
৩. মানুষের জীবনে আল্লাহর দয়া, অনুগ্রহ ও নেয়ামত এত বেশি যে মানুষ আজীবন রোজা রাখলে, জীবনের প্রতিমুহূর্ত নামাজে অতিবাহিত করলেও পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে পারবে না।