এই মুহূর্তে সারা পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি মানুষ গরমে হাঁসফাঁস করছে। বাড়ি থেকে বের হলেই দরদর করে ঘাম বের হচ্ছে সারা শরীর থেকে। এমতাবস্থায় যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তাদের আরও বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অনেকেই আছেন যাঁরা তৈলাক্ত ত্বক হওয়ার কারণে মুখে মশ্চারাইজার বা নিদেনপক্ষে সানস্ক্রিনও ব্যবহার করেন না। আপনিও যদি তাদের মধ্যেই একজন হন তাহলে জেনে রাখুন অনেক বড় ভুল করছেন আপনি। আজ এই প্রতিবেদনে আপনাদের জানানো হবে এমন কিছু টিপস, যা আপনাকে চিরকালের জন্য তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারবে।
তৈলাক্ত ত্বক কী?
প্রথমেই জেনে নিতে হবে তৈলাক্ত ত্বক কাকে বলে। এটি এমন একটি ত্বকের ধরন যা সিবামের অতিরিক্ত উৎপাদন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এটিকে বলা হয় ত্বকের প্রাকৃতিক তেল। এই অতিরিক্ত তেল মুখের কপাল, নাক এবং চিবুক যাকে এক কথায় ‘টি জোন’ বলা হয়, যেখানে গিয়ে জমাট বাঁধে।
আপনার ত্বক যে তৈলাক্ত তা জানবেন কী করে?
তৈলাক্ত ত্বক জানার জন্য আপনি দুই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
১) পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি: প্রথমে যে কোনও ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। কোনও রকম কোনও পণ্য ব্যবহার করবেন না মুখে। কিছুক্ষণ পর আপনি আপনা আপনি বুঝতে পারবেন আপনার টি জোনে ঘাম জমছে কিনা। যদি ঘাম না জমে তাহলে বুঝতে হবে আপনার ত্বক তৈলাক্ত নয়।
২) ব্লটিং পেপার পদ্ধতি: আপনার মুখ যে কোনও ক্লিনজার দিয়ে ধুয়ে নিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ব্লটিং পেপার দিয়ে মুখের বিভিন্ন অংশ চেপে চেপে ধরুন। দেখুন ব্লটিং পেপার আপনার মুখের তেল শোষণ করতে পারছে কি না। ব্লটিং পেপার যদি আপনার মুখের টি জোন থেকে অতিরিক্ত তেল শোষণ করে তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে আপনার ত্বক তৈলাক্ত।
তৈলাক্ত ত্বক হলে ঠিক কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়?
১) ব্রণ: ত্বকে যদি অতিরিক্ত তেল থাকে, ক্ষেত্রে বাতাসে থাকা ঘাম, ময়লা বা তেল খুব তাড়াতাড়ি মুখে জমাট বেঁধে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দেয় এবং ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহার করলেও ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
২) মেকআপের সমস্যা: যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তাদের গরম কালে হালকা মেকআপ করলেও সেই মেকআপ চিরস্থায়ী হয় না। আপনি যতই দামি ফাউন্ডেশন আইশ্যাডো ব্যবহার করুন না কেন, আপনার ত্বক যদি অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয় তাহলে সেই মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
৩) সংবেদনশীলতা: আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাহলে গ্রীষ্মকালের অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে আপনার ত্বক সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই রোদ্দুরে বের হলে ত্বকে লাল র্যাশ বেরিয়ে যায়।
৪) সানস্ক্রিন বাছাই করতে অসুবিধা: তৈলাক্ত ত্বক না হলে যে কোনও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যায় গ্রীষ্মকালে, কিন্তু আপনার যদি তৈলাক্ত ত্বক হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তাদের ক্ষেত্রে নন কমডোজোনিক সানস্ক্রিন উপযুক্ত।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য গ্রীষ্মকালীন কিছু রুটিন: ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে: যাদের মুখে অতিরিক্ত তেল থাকে, তাদের মুখে নোংরা জমে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। প্রতিদিন দুবার ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে। যদি স্যালিসিলিক অ্যাসিডের মত তেল নিয়ন্ত্রণকারী ভালো ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে আপনাকে আর আলাদা করে টোনার ব্যবহার করতে হবে না।
সিরাম ব্যবহার করতে হবে: অনেকেই আছেন যাঁরা গ্রীষ্মকালে মশ্চারাইজার ব্যবহার করেন না। কিন্তু গ্রীষ্মকালে যদি মশ্চারাইজার আপনি ব্যবহার না করেন, ক্ষেত্রে আপনার ত্বক ডিহাইড্রেট হতে পারে। ত্বককে হাইড্রেটেড রাখার জন্য তেল মুক্ত মশ্চারাইজার বা জেল ভিত্তিক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন: যে কোনও ঋতুতে সানস্ক্রিন অপরিহার্য যদিও অনেকের গ্রীষ্মকালেই বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কমপক্ষে SPF 30 যুক্ত নন-কমেডোজেনিক, তেল মুক্ত বা জেল ভিত্তিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করাই উচিত।
মৃদু এক্সফোলিয়েশন: চিনি, বেকিং সোডা বা কোনওপ্রকার বাজার চলতি স্ক্রাবার ব্যবহার করবেন না। এই সমস্ত স্ক্রাবার ব্যবহার করলে ত্বকের মৃত কোষগুলি সঠিকভাবে অপসারিত হয় না। গ্রীষ্মকালের মুখ পরিষ্কার রাখতে তাই অবশ্যই সপ্তাহে দুবার এক্সফলিয়েট করুন যা আপনার মুখের তেল নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে।
প্রসঙ্গত, সর্বোপরি প্রতিদিন আপনি যদি আপনার ত্বকের সঠিকভাবে যত্ন নেন তাহলে আপনার ত্বকের কোন সমস্যাই তৈরি হবে না। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে ক্লিনজিং টোনিং এবং মশ্চারাইজিং অবশ্যই করতে হবে। যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন মেকআপ তুলে তবেই রাতে ঘুমোতে যাবেন। বাইরে বেরোলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতেই হবে। এই নিয়মগুলি মেনে চললেই আপনি যে কোন সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।