ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের চালানো বিমান হামলায় শত শত ভবন ধসে পড়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে পচছে প্রায় ১০ হাজার মরদেহ। এরপরও গাজায় মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানায়, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৫৩৫ জনে পৌঁছেছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে হাজার হাজার মরদেহ উদ্ধার করা যাচ্ছে না। ফলে এগুলো সেখানে থেকেই পচছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে পচা এসব মরদেহের কারণে এখন রোগ-বালাই ছড়াচ্ছে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে এক পোস্টে বলেছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে অব্যাহতভাবে জমা হওয়া কয়েক হাজার মরদেহ রোগবালাই ছড়ানো শুরু করেছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মের গরমের তীব্রতা বাড়ার কারণে মরদেহগুলো দ্রুত গতিতে পচছে।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরায়েল। নতুন করে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান ও ড্রোন হামলায় নুসেইরাত শরণার্থী শিবির এবং গাজা সিটিতে তিন জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ছিটমহল গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নিহত হয়েছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায়। সোমবার ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো রাফার তিনটি বাড়িতে আর উত্তরে গাজা সিটির দুটি বাড়িতে বোমাবর্ষণ করে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজা সিটির হামলায় অন্তত ছয় জন নিহত হয়েছে আর বেশ কয়েক জন আহত হয়েছে।
তবে সোমবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, গাজার মধ্যাঞ্চলে রোববার দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়। হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, সোমবার তারা ইসরায়েল লক্ষ্য করে রকেট ছুড়েছে। এর মাধ্যমে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, গাজায় প্রায় সাত মাস ধরে চলা ইসরায়েলের অবিরাম আকাশ ও স্থল হামলা সত্ত্বেও গোষ্ঠীটির রকেট ছোড়ার সক্ষমতা এখনো বজায় আছে। এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করতে হামাস নেতারা কায়রো সফর করেছেন। রাফায় হামলার কয়েক ঘণ্টা পর মিশরের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন জানায়, হামাসের প্রতিনিধি দল দোহার উদ্দেশে কায়রো ছেড়েছেন, তারা তাদের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে পরে কোনো এক তারিখে লিখিত জবাব দেবেন।
অপরদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পাঁচটি ইউনিট ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতেও জানানো হয়, তারপরও ইসরায়েলি বাহিনীকে সামরিক সমর্থন দিয়ে যাবে মার্কিন প্রশাসন। যেসব স্বতন্ত্র ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার সব কটিই ঘটেছে ফিলিস্তিনের গাজার বাইরে; চলমান যুদ্ধ শুরুর আগেই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমে সব ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযুক্ত চারটি সেনা ইউনিটের বিরুদ্ধে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ইসরায়েল। পঞ্চম ইউনিটের বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল।