৩০ পেরোনোর আগে এখন অনেক মেয়েই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা ভাবেন না। অনেকে আবার বিয়েই করছেন ৩০য়ের বেশ পরে। তার পরে সন্তানধারণের কথা ভাবেন। তবে শরীর সব সময়ে সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে না। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। যদিও মা হওয়ার 'সেরা সময়' বলে কিছু হয় না।
মন চাইলেই মা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। কিন্তু বয়স ৩০ পেরোনোর পরে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে কয়েকটি কথা মনে রাখতেই হবে।
স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের বক্তব্য, ৩০য়ের পর মা হতে চাইলে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। কারণ, এই সময়ের পর থেকে সন্তানধারণের ক্ষমতা কমতে থাকে। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনাও দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে। বেশি বয়সে মা হওয়ার পরিকল্পনা করার আগে জীবনধারায় কোন কোন বদল আনা জরুরি?
১. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে: ওজনের সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। তবে ওজন বেশি হলে শরীরে বাসা বাঁধে হাজার রকম রোগব্যাধি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শরীরে ডায়াবিটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ বাসা বাঁধলে ভ্রুণের ক্ষতি হতে পারে। তাই মা হওয়ার পরিকল্পনা করলে সবার আগে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি।
২. পরিমিত শরীরচর্চা: ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে শরীরচর্চা জরুরি, তবে ভারী শরীরচর্চা কিংবা ব্যায়ামের অভ্যাসও কিন্তু গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত শরীরচর্চা মহিলাদের ঋতুচক্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ কমে গিয়ে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। ফলে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। ওজন কমানোর জন্য কতখানি শরীরচর্চা আপনার জন্য নিরাপদ, সে বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. গর্ভনিরোধক ওষুধ বন্ধ: নিয়মিত গর্ভনিরোধক ওষুধ খাচ্ছিলেন? বন্ধ করুন। ওষুধ বন্ধ করে দেওয়ার পরও কিন্তু শরীরের স্বাভাবিক ঋতুচক্রে ফিরতে সময় লাগবে। অন্তত মাস তিনেক সময় লাগতেই পারে। তাই সেই মতো পরিকল্পনা করুন। যে সময়ে পরিবারে নতুন সদস্য আনার কথা ভাবছেন, তার বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই গর্ভনিরোধক ওষুধ বন্ধ করা প্রয়োজন।
৪. ধূমপান ছাড়ুন, ক্যাফিনের পরিমাণ কমান: নিয়মিত ধূমপান করেন? এই অভ্যাস কিন্তু বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত ধূমপান করলে ডিম্বাণুর ক্ষতি হয়। কেবল মহিলাদের ক্ষেত্রেই নয়, ধূমপানের অভ্যাস পুরুষদেরও শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমানের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। মদ্যপানও এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে শরীরে। এ ছাড়া চা, কফি এবং যে সব পানীয়ে ক্যাফিন থাকে, সেইগুলিরও মাত্রা কমিয়ে আনা জরুরি।
৫. ডায়েটে নজর দিতে হবে: ডায়েটে নজর দিন। 'ফাস্ট ফুড' একেবারে বাদ। সুষম খাবার বিশেষ করে ফল, শাকসব্জির পরিমাণ বাড়ান। বারেবারে খান। প্রচুর জল খেতে হবে। প্রতি দিনে অন্তত আট গ্লাস। দরকার ফলিক অ্যাসিড আছে, এমন খাবার খাওয়া। মুসুর ডাল, কড়াইশুঁটি, সয়াবিন, সিদ্ধ ডিম, বিটের রস ইত্যাদিতে প্রচুর ফলিক অ্যাসিড থাকে। খুব ভাল হয় অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কয়েক মাস আগে তা শুরু করতে পারলে। সময় যত গড়াবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নতুন-নতুন যোগ হবে—আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ডি, ই। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা নাবলে কোনও ওষুধ খাবেন না।