একটি ছবিও এমন কথাও বলে, যা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এমনই একটি ছবি ১৯৯৩ সালে সুদানে বিখ্যাত ফটোগ্রাফার কেভিন কার্টার তুলেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী তরুণ ফটোগ্রাফার কেভিন তাঁর জীবনে এমন অনেক ছবি তুলেছেন, যা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
এই ফটোগ্রাফগুলির মধ্যে একটি তাঁর নাম বিশ্বের সেরা ফটোগ্রাফারদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই ছবিটি তাঁকে অনেক পুরষ্কার এনে দেয়, কিন্তু এই ছবিও বিতর্কের অংশ হয়ে ওঠে। এই ছবি তোলার পর কেভিন এতটাই হতাশ হয়ে পড়েন যে, তিনি আত্মহত্যা পর্যন্ত করেন।
ঐ ছবিটি সুদানের। যেখানে একটি শিশুকন্যা ক্ষিদের জ্বালায় নিচে পড়ে যায়, তার পেছনে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে একটি শকুন। এই ছবিটি দেখে অনুমান করা হয়েছিল যে তার পিছনে বসে থাকা শকুনটি শিশুকন্যার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে, যাতে সে মারা যাওয়ার সাথে সাথে তাকে খেয়ে ফেলতে পারে। এই ছবি তোলার কিছুক্ষণ পর জানা গেল যে যার ছবি তোলা হয়েছে সে মেয়ে নয়, ছেলে। যার নাম কং নিয়ং। এই বিখ্যাত ছবির নাম রাখা হয়েছিল The Vulture And The Little Girl.
এই ছবিটি ২৬ মার্চ, ১৯৯৬-এ বিখ্যাত সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনের সাথে প্রকাশিত হয়েছিল। এটা দেখে লোকজন এতটাই বিচলিত হয়ে পড়ে যে মেয়েটি বেঁচে আছে কি না তা জানতে তারা পত্রিকা অফিসেও ফোন করেন। এছাড়াও, এই ছবি দেখার পরে, লোকেরা কেভিনের অনেক সমালোচনাও করেছে। সেখানে উপস্থিত কেভিনকে লোকজন দ্বিতীয় শকুন বলা শুরু করে। এটা শুনে কেভিন বেশ ধাক্কা খান।
এই ছবির মাধ্যমে আফ্রিকার ক্ষিদে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কেভিন, যিনি এই ছবিটি তুলেছিলেন, তিনি বিশ্ব বিখ্যাত পুলিৎজার পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। এ সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় সহিংসতা হয়। যেটি কেভিন তার বন্ধু কেন ওস্টারব্রোকের সাথে কভার করতে গিয়েছিলেন, যেখানে কেন মারা যান।
সুদানে তোলা বিতর্কিত ছবিটি যখন সমালোচিত হচ্ছিল, তখন কেভিন তাঁর বন্ধুর মৃত্যুর খবরে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এরপর ১৯৯৪ সালের ২৭শে জুলাই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার একটি নদীর তীরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়ির নিষ্কাশন পাইপের সঙ্গে আরেকটি পাইপ লাগিয়ে তা থেকে বেরিয়ে আসা বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস মুখে নেন, যার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। এই সময় কেভিন একটি সুইসাইড নোটও রেখেছিলেন। অন্যদিকে, এটিও প্রকাশ পেয়েছে যে, সুদানে কেভিন যে শিশুটির ছবি তুলেছিলেন সে অনাহারে মারা যায়নি বরং বেঁচে গেছে। যিনি ২০০৮ সালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।