তীব্র গরমে নাজেহাল দশা। প্যাচপ্যাচে গরমে একেবারে গলদঘর্ম। কিন্তু বাড়িতে বসে থাকা তো যায় না,কাজের জন্য রাস্তায় বের হতেই হয়। আর ঠিক তখনই অত্যাধিক ঘাম হয়ে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। এতে শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলস্বরূপ শরীরে অস্বস্তি, ক্লান্তির মতো একাধিক উপসর্গর দেখা মেলে।
তাই এই সময় দরকার শরীর হাইড্রেটেড রাখা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময় আপনাকে খেতে হবে প্রচুর পরিমানে জল ও জলযুক্ত খাবার।
তবে গরমে তৃপ্তি পেতে রোজ খান লেবুর জল। কিন্তু এই সময় অনেক কার্বনেটেডযুক্ত খাবার খেয়ে থাকি, যা একেবারেই ঠিক না। এই পানীয়গুলি শরীরকে সাময়িক ঠান্ডা ও চাঙা করলেও এর কোনো পুষ্টিগুণ নেই। বরং শরীরকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, বাইরের খোলা শরবত, বাইরের খাবার, ভাজা যেকোনও খাবার এই সময় যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন। এমনকি বাড়িতেই খান পাতলা ঝোলযুক্ত খাবার। এটি এই তীব্র গরমে আপনার বদহজমের সমস্যা থেকে আপনাকে বাঁচাবে।
গরমে কী ধরনের খাবার আমাদের শরীরের জন্য ভালো চলুন জেনে নিই-
জল- পূর্ণবয়স্ক একজন নারীর দিনে অন্তত ২.৫-৩ লিটার জল খেতে হবে। আবার পূর্ণবয়স্ক একজন পুরুষের ৩-৩.৫ লিটার জল পান করা উচিত। তবে কিডনি রোগীদের অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে জলের পরিমাণ জেনে নিতে হবে। এই তীব্র গরমে লেবু বা ফলের শরবত খাওয়া খুবই উপকারী আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য। তবে প্রাকৃতিক উপাদান যেমন- ডাবের জলও এই সময় খুব দারুণ উপকারী। এগুলি খুব সহজেই শরীরের জলের ঘাটতি পূরণ করে। ঘামের ফলে হারিয়ে যাওয়া খনিজ লবণেরও চাহিদাও পূরণ করে এই শরবতগুলি।
এছাড়াও, জলের পাশাপাশি আপনি খেতে পারেন ডাবের জল, লেবুজল, আম পান্না, বেলের শরবত, লস্যি বা ঘোল, চিনি ছাড়া তাজা ফলের রস ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে, এই সময় যত পারবেন স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করুন। তবে অতিরিক্ত চিনি দেওয়া সফট ড্রিংকস, জুস, চা, কফি দেহকে আরও জলশূন্য করে দেয়। তাই এগুলি এড়িয়ে চলুন। কী কী ফলের রস আপনি খেতে পারেন-
আখের রস- তীব্র গরমের দাবদহে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে খুবই কার্যকরী আখের রস। তবে এর সঙ্গে বিট লবণ, পুদিনাপাতা এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেলে এর স্বাদও বাড়ে। সঙ্গেই বাড়ে পুষ্টিগুণও।
বেলের শরবত- এই শরবত আমাদের পাকস্থলী ঠান্ডা রাখে। এতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, প্রোটিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১ এবং বি২, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফাইবারের মত পুষ্টিগুণ। যা আপনার স্বাস্থ্যকে ভালো রাখবে।
পুদিনার শরবত- এই শরবত শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে এবং সতেজ অনুভূতির জন্য অতুলনীয়।এছাড়াও আপনি থেকে পারেন জিরে জল। এটি নোনতা স্বাদের হয়। গরমে হজমের সাহায্য করে এই জল। কিন্তু মনে রাখবেন, ডায়াবেটিস রোগীরা শরবতে আলাদা করে চিনি বা মধু যোগ করবেন না। এতে আপনার ক্ষতি হতে পারে।
শাকসবজি- এই গরমের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আপনাকে যে কোনও শাকসবজি প্রচুর পরিমানে খেতে হবে। যেমন- কাঁচা পেঁপে, পটোল, শসা, চিচিঙ্গা, গাজর, লাউ, পালংশাক, টমেটো সহ এই ধরণের সবজি বেশি খেতে হবে। এগুলি জলের ঘাটতি দূর করে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া পাতলা করে রান্না করা টক ডাল, শজনে ডাল এসবও বাড়িতে বানিয়ে খেতে পারেন।
মরশুমের ফল- গরমে সব থেকে বাজারে যে ফল দেখা যায় তা হল- আম ও তরমুজ। এই দুটিতেই জলের পরিমান বেশি। বিশেষ করে কাঁচা আম খুবই ভালো জলশূন্যতা দূর করার জন্য। কাঁচা আমে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও ম্যাগনেশিয়াম। যা শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। অন্যদিকে, তরমুজ শরীর ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। এতে আছে ভিটামিন ও খনিজ লবণ, যা এই গরমে শরীরের জন্য দরকার।