স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারধরসহ গরম খুন্তির ছ্যাঁকা, মৃত্যু যন্ত্রণায় কিশোরী গৃহকর্মী


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 19-04-2024

স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারধরসহ গরম খুন্তির ছ্যাঁকা, মৃত্যু যন্ত্রণায় কিশোরী গৃহকর্মী

স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারধরসহ গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে এক কিশোরী গৃহকর্মীকে। নাজিরা নামের ওই গৃহকর্মী এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকায় হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত আনোয়ার হোসেনের বাসায়।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ঈদের দুই দিন পর ভাত খেতে চাওয়ায় শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় অসহ্য যন্ত্রণায় এক গ্লাস পানি চাইলে বুকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। মুখে কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখে এই পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে আনোয়ার ও তার স্ত্রী।

ঘটনার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে নাজিরার দাদা তাকে সেখান থেকে গাইবান্ধায় নিয়ে আসেন। এরপর প্রথমে গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করান।

বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. শাহীন শাহ বলেন, গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) নাজিরাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। তার ঘাড়, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় ওই স্থানগুলোতে ইনফেকশন হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। তবে তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়।

জানা গেছে, নাজিরা গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব বালয়াপাড়ার বাসিন্দা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ইসা খা আর অসুস্থ জোছনা বেগম দম্পতির মেয়ে। অভাবের সংসারে কিছুটা ভার কমাতে গত রমজান মাসে স্থানীয় প্লাবন নামের স্থানীয় যুবকের মাধ্যমে নাজিরাকে গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকায় পাঠান বাবা-মা।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে ভুক্তভোগী নাজিরা জানায়, কাজে যোগদানের পর থেকেই নানা অজুহাতে তাকে বেধরক মারধর করতেন গৃহকর্তা আনোয়ারের স্ত্রী। ঈদের দুই দিন কাজ শেষে খাবার চাওয়ায় হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠেন আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী। একপর্যায়ে স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারধর ও গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেন তারা। খবর পেয়ে গত ১৩ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তার দাদা ঢাকা থেকে গাইবান্ধার বাড়িতে নিয়ে আসেন।

পরিবারের দাবি, দিনভর কাজের পর ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চেয়েছিলেন এক প্লেট ভাত; আর তাতেই পুড়িয়ে দেওয়া হয় নাজিরার শরীরের বিভিন্ন অংশ।

নাজিরার মা জোছনা বেগম জানান, ঢাকা থেকে নিয়ে আসার পরদিন খুব অসুস্থবোধ করলে নাজিরাকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৭ এপ্রিল ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বলা হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তারা।

বর্তমানে মেয়ের অবস্থা ভালো নয় জানিয়ে তিনি আরও জানান, পারিবারিক আর্থিক সমস্যার কারণে রমজান মাসে প্লাবন নামের এক যুবকের মাধ্যমে নাজিরাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। প্লাবন বিমানবন্দরের উচ্চমান সহকারী আনোয়ার হোসেনের বাসায় তাকে গৃহকর্মী হিসেবে রাখেন। কাজে যোগদানের পর থেকেই আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নির্যাতন করতেন নাজিরাকে। সর্বশেষ ঈদের পর স্বর্ণ চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গরম খুন্তি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগ করেন নাজিয়ার মা।

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে উচ্চমান সহকারী পদে চাকরি করা আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে ওই কিশোরীকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া যুবক প্লাবনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিমানবন্দরে অফিস পিয়ন হিসেবে চাকরি করি। আনোয়ার স্যারের অনুরোধে তার বাসার কাজের জন্য আমার আত্মীয় নাজিরাকে গৃহকর্মীর কাজে ঢাকা নিয়ে যাই। নাজিরা যখন কাজে যোগ দেয় এরপর থেকে আমাকে আনোয়ার স্যার আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়নি। কোনো খোঁজখবর জানতে চাইলে তিনি গুরুত্ব দিতেন না।

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ ঈদের পর আনোয়ার স্যার আমাকে ফোন করে জানান তিনি নাজিরাকে নিয়ে কুমিল্লায় আছেন। সেখানে নাজিরার শারীরিক অবস্থা খারাপ। কী হয়েছে সেটা জানতে চাইলে তিনি আমার সঙ্গে রাগারাগি করেন। পরে আমি খোঁজ নিয়ে ঘটনা জানতে পেরে নাজিরার দাদাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিই। আনোয়ার স্যার মাইক্রোবাসে করে নাজিরাকে নিয়ে এসে তার দাদার তুলে দেন। এরপর থেকে আনোয়ার স্যারের ফোন নম্বর বন্ধ রয়েছে। শুনেছি নাজিরা কাজের যোগদানের কয়েক দিনের মাথায় একবার পাঁচ হাজার চুরি করে ধরা পড়ে। ওই ঘটনার পর থেকে আনোয়ার স্যারের স্ত্রী নাজিরাকে খুব নির্যাতন করতেন।

প্লাবন বলেন, আমি নাজিরাকে দেখে মর্মাহত। গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সময় আমি তার সঙ্গে ছিলাম। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করছি। আনোয়ার স্যারকে ভালো মানুষ মনে করেছিলাম কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]