যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক মানসিক ভারসাম্যহীন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যুবক উইন রোজারিওকে গুলি করে হত্যার মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে আরও এক বাংলাদেশিকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। এ দু'টি ঘটনায় চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১২ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ২টায় যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ওয়ারেন শহরে নিজ বাড়ির সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন হোসেন আল রাজী (১৯)নামের এক বাংলাদেশি যুবক। এ ঘটনায় পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মিশিগানে বসবাসরত হাজার হাজার বাংলাদেশি।
পুলিশের দাবি, আল রাজী পুলিশকে লক্ষ্য করে অস্ত্র প্রদর্শন করলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের এ দাবিকে অসত্য বলে উল্লেখ করেছেন আল রাজীর বাবা মোহাম্মদ আতিক হোসেন। তিনি বলেন পরিবারের সদস্যদের সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করায় জরুরি সেবা ৯১১-এ কল দেয়া হয়। তবে পুলিশ তাকে গুলি করে মেরে ফেলবে এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।
জানা যায়, নিজের ঘরে হাতে অস্ত্র নিয়ে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছিল সে। তার উচ্ছৃঙ্খল আচরণে ঘাবড়ে যায় পরিবারটি। ভয় পেয়ে তার বাবা-মা ছোট বোনকে নিয়ে গ্যারেজে গাড়ির ভেতর আশ্রয় নেন। অতিষ্ঠ ১৬ বছরের ছোট ভাইয়ের ফোনকল পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ যুবকটিকে সশস্ত্র অবস্থায় দেখতে পায় এবং তাকে অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু এতে সে কর্ণপাত করেনি। সে অস্ত্র হাতে নিয়ে ঘরের বাইরে আসার চেষ্টা করে।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে এসে যুবকটির হাতে অস্ত্র দেখা যায়। সেটি ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বলে পুলিশ। কিন্তু ওই যুবক এতে কর্ণপাত করেননি। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে অস্ত্র প্রদর্শন করলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার তদন্ত চলছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ওয়ারেন পুলিশ অফিসার ক্যাপ্টেন ছ্যারলেস রোশটন।
জানা গেছে, আতিক হোসেনের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার সুপাতলা। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে আল রাজি বড়। সাত বছর আগে ফ্যামিলি ভিসায় তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। থাকতেন ওয়ারেন শহরের রায়ান সড়কের এলিভেন মাইলের গারবর স্ট্রিটে।
২৭ মার্চ দুপুরে উইন রোজারিও'র ফোন পেয়ে পুলিশ সাহায্য করতে তার বাড়িতে আসেন। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী দরোজা খোলার পর উইন রোজারিও কাঁচি নিয়ে দুই পুলিশের দিকে ছুটে এলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোঁড়েন। ফলে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কের ডেইলি নিউজের প্রতিবেদনে বলে হয় উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পুলিশের বডিক্যাম ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ না করায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষ।