জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির মুখে বাংলাদেশের প্রশংসা


নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 30-03-2022

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির মুখে বাংলাদেশের প্রশংসা

অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা, সামাজিক সূচক, প্রযুক্তি, ব্যাংকিং, গ্রামীণ উন্নয়ন বা নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে একটি দেশ কীভাবে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির পথে অদম্য গতিতে এগিয়ে যেতে পারে, তার উজ্জ্বল উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের জন্য যা করতে চেয়েছেন, সম্ভবত সেই অর্জনই আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) বিদেশী অতিথিবর্গের  সম্মানে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২২ উদযাপন অনুষ্ঠানে একথা বলেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ শাহিদ। ইভেন্টটিতে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের শতাধিক রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তিনি বলেন, “আজকে আমাদের মধ্যে যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানার সুযোগ পাননি, তাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণটি পড়ুন, যেটি আজ ইউনেস্কোর মেমোরি অফ ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে”। তিনি গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার, ও সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তির প্রতি বঙ্গবন্ধুর অটল বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেন।

সাধারণ পরিষদ সভাপতি ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের উন্নয়নে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেন। যার ফলে জাতিসংঘ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।  তিনি এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন, যা বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় এত উঁচুতে তুলতে ভূমিকা রেখেছে।

সাধারণ পরিষদ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে উদীয়মান অর্থনীতির সাথে রয়েছে প্রাণবন্ত গণতন্ত্র। কোভিড-১৯ মহামারীর অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি বড় প্রমাণ হল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গত বছর এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের চুড়ান্তভাবে উত্তরণের সুপারিশ প্রদান। তিনি জনগণ, বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশের অব্যাহত বিনিয়োগের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান: "জয় বাংলা" উচ্চারণ করে তার বক্তব্য শেষ করেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা তাঁর স্বাগত বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতি “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়” উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “বহুপাক্ষিকতার প্রতি আমাদের যে অবিচল বিশ্বাস তা এই আদর্শ থেকেই এসেছে”। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণ থেকে উদ্বৃত করে তিনি বলেন, “জাতিসংঘ সনদে যে মহান আদর্শের কথা বলা হয়েছে তা আমাদের জনগণের আদর্শ”।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “জাতির পিতার সেই আদর্শিক মর্মবাণী আজও উজ্জ্বল। জাতিসংঘে, আমরা সেসকল বিষয় নিয়ে কথা বলি ও নেতৃত্ব দেই যার লক্ষ্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা। শান্তিরক্ষা এবং শান্তি বিনির্মাণ ইস্যুতে আমাদের নেতৃত্ব; শান্তির সংস্কৃতি, এবং বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের আহ্বান; ভ্যাকসিন সমতা, ডিজিটাল বিভাজন দূর করা, জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয় ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নেওয়া, অভিবাসন সমস্যা ও অভিবাসীদের অধিকার রক্ষা, লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা এবং শিশুদের অধিকার রক্ষায় আমাদের প্রতিশ্রুতি হল জাতিসংঘের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে আমাদের অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ। এ প্রসঙ্গে তিনি মানবিক আহ্ববানে সাড়া দিয়ে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাহসী সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন।

স্বাধীন দেশ হিসেবে ৫১ বছরের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ যেসকল রূপান্তরধর্মী পরিবর্তন এনেছে এবং যে আর্থ-সামাজিক উন্নতি সাধন করেছে তা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনে থেকে এই অদম্য অগ্রযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন”। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের সকল গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বহুপাক্ষিকতা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

কোভিড-১৯ জনিত কারণে দীর্ঘ প্রায় দুবছর পর জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের উৎসবমূখর এই আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন আমন্ত্রিত অতিথিগণ। অতিথিগণকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার দ্বারা অ্যাপায়ন করা হয়।

রাজশাহীর সময়/এএইচ


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]