নগরীতে রাতের আধারে পুকুর ভরাট, ওসির হস্তক্ষেপে বন্ধ


নিজস্ব প্রতিবেদক : , আপডেট করা হয়েছে : 02-04-2024

নগরীতে রাতের আধারে পুকুর ভরাট, ওসির হস্তক্ষেপে বন্ধ

রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানাধীর মেহেরচন্ডি এলাকায় প্রায় ১০ বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে ভরাট কার্যক্রম চালাচ্ছে জনৈক এক ব্যক্তি। অথচ উচ্চ আদালতের কড়া নির্দেশনা রয়েছে রাজশাহী নগরীতে কোনোভাবেই পুকুর-জলাশয় ভরাট করা যাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নগরীতে একের পর এক পুকুর ভরাট চলছেই। এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছেন সংশ্লিষ্ট থানা, স্থানীয় কাউন্সিলর, পাতি নেতা ও গুন্ডারা। কোনো কোনো কাউন্সিলর রীতিমতো পুকুর ভরাট করে সেই পুকুরের মধ্যে আবাসন গড়ে তুলছেন। এর পর সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ দিয়ে তাঁর সেই আবাসন এলাকায় পাকা রাস্তাও করছেন। এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কাউন্সিলররা। এসব নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। পুকুর খেকোদের বিরুদ্ধে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিপ্তর ও পুলিশের কাছে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়লেও কোনো লাভ হচ্ছে না। দেখবো, দেখছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি, এমন উত্তর মিলছে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের মুখ থেকে। কিন্তুশক্তিশালী এ চক্রটির পরোক্ষ মদদে একের পর এক ভরাট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এই পুকুর দেখে আসছি। পুকুরটিতে গোসল করে বড় হয়েছি। এখন পুকুরের মধ্যে দেখি ভিটার সাইনবোর্ড। এটা হয় কিভাবে? তাহলে কি টাকা দিলে পদ্মা নদীকেও ভিটা করা যাবে?  

মেহেরচন্ডি এলাকায় পুকুর ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে, চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এক্ষুনি সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেমন কথা, তেমন কাজ। ১৫ মিনিটের মধ্যে সরেজমিনে পৌঁছান ওসি। কিন্তু ওসির উপস্থিতি দেখেই যে যার মতো এদিক সেদিক পালিয়ে যায়। বন্ধ হয় পুকুর ভরাট। তবে পুকুরটি কয়দিন রক্ষা পাবে সেই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ্ রয়েছে জনমনে। কারন ভূমি অফিসের হস্তক্ষেপ নেই।

একাধীক শিক্ষিত মুরব্বিদের বক্তব্য হলো, শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুরকে ভিটাতে পরিণত করছে ভূমি অফিসের একটি চক্র। সাবেক এক জেলা প্রশাসকের সময়ে কাঠা প্রতি ২লাখ টাকা করে ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে পুকুর বা জলাশয়কে রাতারাতি ভিটাতে পরিণত করা হয়েছে। এখনো দুই-একটি পুকুর এভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করছে ভূমি অফিসের সেই অসাধু চক্রটি।

সরেজমিন অনুসন্ধানের দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ডেই এভাবে স্থানীয় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ মদদে পুকুর ভরাট করে হচ্ছে প্লট। এর সঙ্গে ভূমি অফিসের কিছু অশাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা জড়িত রয়েছেন। নগরীর ৫.৭.৩.১৫. ১৬.১৭.১৮.১৯.২১.২৫.২৬.২৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়াও প্রায় সবগুলো ওয়ার্ডেই পুকুর ভরাটের মহোৎসব চলছে বা শেষ হয়েছে। কোনটা গোপনে আবার কোনোটা প্রকাশ্যে। আগে ভরাট হওয়া পুকুর জলাশয়গুলোর শ্রেণী পরিবর্তন করতে কাঠাপ্রতি ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন ভূমি অফিস-সহ সাবেক এক জেলা প্রশাসক।

এদিকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথোরাইজড কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নগরীতে ব্যাপক হারে পুকুর ভরাট হচ্ছে। এটি সত্যিই আশঙ্কাজনক। শ্রেণি ভিটা থাকলে, সেখানে আমাদের নকশার অনুমোদন দিতে তখন আর কোনো বাধা দেওয়ার কিছু থাকে না।’

জানতে চাইলে, রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ আমি দিব না। এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]