বিশ্বে প্রথম জীবিত মানুষের শরীরে বসানো হলো শুয়োরের কিডনি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 23-03-2024

বিশ্বে প্রথম জীবিত মানুষের শরীরে বসানো হলো শুয়োরের কিডনি

এই প্রথমবার শুয়োরের শরীর থেকে কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হল মানুষের শরীরে। আর অস্ত্রোপচারও প্রায় একশো শতাংশ সফল। এতদিন ব্রেন-ডেথ রোগীদের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল শুয়োরের কিডনি। বিশ্বে এই প্রথমবার জীবিত এবং সজ্ঞানে থাকা রোগীর শরীরে বসানো হয়েছে শুয়োরের কিডনি। শুধু তাই নয়, যে শুয়োরের শরীর তেকে কিডনি নেওয়া হয়েছিল তাকে আগে জিনগতভাবে পরিবর্তিত করা হয়েছে। অর্থাৎ জেনেটিকালি মডিফায়েড শুয়োরের শরীর থেকে কিডনি নিয়েই বসানো হয়েছে মানুষের শরীরে।

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের ডা. তাতসুও কাওয়াই বলছেন, শুয়োরের কিডনি গ্রহণ করেছে মানুষের শরীর। কিডনি তার কাজকর্ম করাও শুরু করেছে। কিডনি ফাংশন স্বাভাবিক। শুয়োরের হার্ট মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হলেও তা সফলভাবে কাজ করতে পারেনি। কিন্তু কিডনি চনমন করে চলেছে।

বস্টনের বাসিন্দা রিচার্ড স্লেম্যানের দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গিয়েছিল। গত সাত বছর ধরে ডায়ালিসিস চলছিল তাঁর। চিকিৎসকরা বুঝেছিলেন কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা শুয়োরের কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। তবে ট্রান্সপ্লান্টের আগে ল্যাবরেটরিতে পশুর কিডনিকে মানুষের শরীরে বসানোর উপযুক্ত করে নেওয়া হয়েছিল।

গবেষক কাওয়াই বলছেন, এতদিন শুধুমাত্র ব্রেন-ডেথ রোগীর শরীরে শুয়োরের কিডনি প্রতিস্থাপিত করা হচ্ছিল। দু’বার সেই সার্জারি হয়। কিডনি মাস দুয়েক চললেও তারপর রোগীর মৃত্যু হয়। কিন্তু এবার জীবিত ও সজ্ঞানে থাকা রোগীর শরীরেই কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে।

চিকিৎসক বলছেন, শুয়োরের শরীরে হার্ট, কিডনি (Pig kidney), ফুসফুসের মতো অঙ্গের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটানো হচ্ছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রক্রিয়ায়। পশুর শরীর থেকে নেওয়া অঙ্গ মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াকে বলে জ়েনোট্রান্সপ্লান্টেশন (xenotransplantation)। এইসব অঙ্গ যাতে মানুষের শরীরেও কাজ করতে পারে সে জন্যই এই গবেষণা চলছে বিগত কয়েক বছর ধরে।

প্রাথমিকভাবে শুয়োরের শরীরের হার্ট ও কিডনি মানুষের শরীরে বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতিস্থাপন করার মতো কিডনির অভাবে মানুষের মৃত্যু হয়তো এ বার ঠেকানো সম্ভব হবে। বিকল হয়ে যাওয়া কিডনির (Pig kidney) কাজ আর ডায়ালিসিসের মাধ্যমে চালিয়ে যেতে হবে না। অন্য প্রাণীর কিডনিকে মানুষের শরীরের মানানসই করেই প্রতিস্থাপন করা যাবে সফল ভাবে। অন্য প্রাণীর থেকে আনা সেই কিডনি মানবদেহে কাজ করবে একেবারে মানুষের কিডনির মতোই।

তবে এই প্রক্রিয়া জটিল। গবেষকরা বলছেন, ম্যাসাচুসেটসের ইজেনেসিস ল্যাবরেটরিতে বিশেষ উপায়ে সেই শুয়োরকে প্রতিপালন করা হয়। তার শরীরের অন্তত ১০টি জিন বদলে দেওয়া হয় এমন করে যাতে তার শরীর থেকে নেওয়া অঙ্গ মানুষের শরীরে কাজ করতে পারে। এজন্য ক্রিসপার জিন এডিটিং টেকনোলজির সাহায্য নেওয়া হয়। পশুর জিনকে কাটাছেঁড়া করে, জিনের বিন্যাস বদলে দিয়ে গবেষণা শুরু হয়। প্রতিস্থাপিত অঙ্গ যাতে মানুষের শরীর গ্রহণ করতে পারে সেইভাবেই জিনের সাজসজ্জা বদলে দেওয়া হয়েছিল।

বিজ্ঞানীা বলছেন, এই সফল প্রতিস্থাপন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এর ফলে, কিডনি তো বটেই, মানবদেহের বিকল হয়ে যাওয়া বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পরিবর্তে অন্য প্রাণীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পথ খুলে গেল।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]